দীলিপ ঘোষ।
তৃণমূলের শহিদ দিবস যুব কংগ্রেসের থেকে ‘হাইজ্যাক’ করা। তাই শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২১ জুলাইকেই বেছে নিল বিজেপি। ওই দিন মমতা যখন ভার্চুয়াল বক্তৃতা দেবেন, তখন দিল্লির রাজঘাটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ এনে ধর্নায় বসবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দীলিপ ঘোষ। একইসঙ্গে রাজ্যের প্রধান বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীও এদিন ভার্চুয়াল সভায় বক্তৃতা দেবেন বিজেপির রাজ্য দফতর হেস্টিংস কার্যালয় থেকে।
তৃণমূলের পাল্টা শহিদ দিবস যে ২১ জুলাইয়েই পালন করতে চলেছে বিজেপি, তা সোমবারই প্রথম জানিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। মঙ্গলবার যে তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে পারে সে কথাও জানানো হয়েছিল ওই প্রতিবেদনে। সেই মতোই মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্য বিজেপির নেতা শমীক ভট্টাচার্য একটি সাংবাদিক বৈঠকে শহিদ দিবস পালনের ঘোষণা করেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘শহিদ দিবস পালন করে তৃণমূল নিজেদের আক্রান্ত হিসেবে প্রমাণ করতে চাইলেও আদতে তারাই আক্রমণকারী।’’ তাই তৃণমূলের ‘প্রকৃত রূপ’ দেখাতে ২১ জুলাই শহিদদের স্মরণ করবে তাঁরাও।
সাংবাদিক বৈঠকে শমীক বলেন, ‘‘ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে রাজ্য জুড়ে। পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে বিধানসভার ভোট পর্যন্ত আমাদের ১২৪ জন কর্মী খুন হয়েছেন। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই ২১ জুলাই সাড়ে ১১টার সময় দিল্লির রাজঘাটে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দীলিপ ঘোষের নেতৃত্বে অন্যান্য সাংসদরা ধর্ণায় বসবেন। প্রতিবাদ জানাবেন।’’
বুধবার, ২১ জুলাই বিজেপির শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলির স্লোগান হবে— পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আক্রান্ত এবং গণতন্ত্র বিপন্ন। এই স্লোগানকে সামনে রেখেই দিল্লির রাজঘাটে ধর্নায় বসবেন দীলিপ এবং অন্যান্য বিজেপি নেতারা। পরে ৬, মুরলীধর সেন লেনে বিজেপির রাজ্য দফতর, হেস্টিংসের কার্যালয়ে দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস পালন করবেন বিজেপির নেতা-নেত্রীরা। সেখানে শুরুতেই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বক্তব্য রাখবেন। অনুষ্ঠান শেষ হবে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দীলিপের বক্তব্য দিয়ে।
মঙ্গলবার শমীক বলেছেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাসে বহু বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন।’’ এমনকি রায়গঞ্জে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনাটিকেও ‘‘বিজেপি কর্মীকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে,’’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। শমীকের অভিযোগ, ‘‘মানুষের মনে ভয় সঞ্চার করতেই এ ভাবে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিজেপি কর্মীদের।’’ পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, সমাজবিরোধী এবং রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত না করেই ১৫ মিনিটের মধ্যে পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, ঘটনাটি আত্মহত্যার।’’ যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়গঞ্জের ওই ঘটনায় মৃত ব্যক্তি কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন।
এ ছা়ড়া ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’য় শহিদদের ছবি কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন করা, তাতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোও বিজেপির শহিদ দিবসের নানা কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম। পাশাপাশি সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটিকেই ইউটিউব এবং ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে বিজেপি অনুগামীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন শমীক। তাঁর কথায়, ‘‘শহিদ দিবসে বিজেপির অনুষ্ঠান জেলায় জেলায় বুথ স্তর থেকে শুরু করে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’’ প্রসঙ্গত, শহিদ দিবসে তৃণমূলের অনুষ্ঠান এবং মমতার বক্তৃতা নেটমাধ্যমে গোটা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। এমনকি গুজরাতে মমতার ২১ জুলাইয়ের বক্তৃতার পোস্টারও পড়েছে। তার পাল্টা হিসেবে গোটা দুনিয়ায় বিজেপির শহিদ দিবস ছড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা করলেন শমীক।