মদন মিত্রের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক। —ফাইল চিত্র।
সীতাকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্যের অভিযোগ। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হল পুরুলিয়ার ঝালদা থানায়। বিজেপি জেলা নেতৃত্বের তরফে অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হেনেছেন মদন। অশান্তিতে উস্কানিও জুগিয়েছেন তিনি।
গত ২৫ জানুয়ারি কাশীপুরে সভা করেন মদন। সেখানেই তিনি সীতাকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। ওই দিনের বক্তৃতায় মদন বলেন, ‘‘ভাগ্য ভাল রাবণ সীতাকে অপহরণ করেছিল। সেই সময় বিজেপি ছিল না। নইলে সীতা মায়ের পরিণতি হাথরসের মেয়েটির মতো হত। আজ রামকে বেচছে বিজেপি, কাল নেতাজিকে বেচবে। গাঁধীজিকে গুলি করেছিল যে নাথুরাম গডসে, তার মন্দির পর্যন্ত বানিয়েছে এই বিজেপি।’’
মদনের এই মন্তব্যেই চটেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। জেলা বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর মাহাতো এবং স্থানীয় বিজেপিকর্মীরা মিলে ঝালদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁদের অভিযোগ, সীতাকে নিয়ে এমন কুরুচিকর মন্তব্য করে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হেনেছেন মদন। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে মদনকে নিয়ে যদি কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার দায় তাঁদের উপর বর্তাবে না বলেও জানিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব।
কিন্তু তিনি কোনও কুরুচিকর মন্তব্য করেননি বলে দাবি করেছেন মদন। তিনি বলেন, ‘‘একটা শতাব্দিতে যে সিনেমাটা অশালীন হয়, পরের শতাব্দিতে সেটাই অস্কার পায়। এই সম্পর্কে ওদের কোনও ধারণাই নেই। ওদের যেটা অশালীন বলে মনে হচ্ছে, প্রথমে মনে হওয়া উচিত ছিল, গোলি মারো শালো কো স্লোগানটা কী ছিল। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমি বলছি হাথরস-কাণ্ড ওদের তৈরি করা। বিজেপি-র নেতৃত্বেই ওই ঘটনা ঘটেছে।’’
ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের যে অভিযোগ উঠছে, সেই প্রসঙ্গে মদন বলেন, ‘‘রাবণ সীতাকে অপহরণ করার পর কোনও অসম্মান করেনি। এর ভূরি ভূরি প্রমাণ রামায়ণে রয়েছে। ওরা আমার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে। যতগুলো কেন্দ্র আছে সব জায়গাতেই করুক। আমি ২৯৪ কেন্দ্রে একই কথা বলব। আমাকে অশালীন বলার আগে নিজেরা কী বলছেন, করছেন ভেবে দেখুন ওঁরা।’’
মদনের মন্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তবে অযোধ্যাকে যদি সত্যি বলে মানা হয়, সে ক্ষেত্রে সীতার করুণ পরিণতি নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত বলে মত তাঁর। কুণাল বলেন, ‘‘রামকে একটুও অশ্রদ্ধা করছি না আমি। কিন্তু সীতামাতাকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় জঙ্গলে ছেড়ে আসা হয়েছিল। অযোধ্যা সত্যি হলে সেখানে বাল্মীকির আশ্রম, সীতার ঘর, লবকুশের জন্মস্থান সবই রয়েছে। সীতার পাতালপ্রবেশের কুণ্ডও রয়েছে। সতীত্বের প্রমাণ দিতে অগ্নিপরীক্ষায় ঠেলে দেওয়া হয় সীতাকে। শেষমেশ পাতাল প্রবেশ করেন তিনি অর্থাৎ আত্নহত্যা করেন। এটাও মা-বোনেদের মাথায় রাখতে হবে। রামরাজ্যের কথা যাঁরা বলছেন, অযোধ্যার কথা বলছেন, সীতার কাহিনীও নিশ্চয়ই মানবেন তাঁরা। আমি ভগবান রামকে এক ইঞ্চিও ছোট করছি না। কিন্তু রামায়ণ বাল্মীকি লিখে থাকুন বা পরবর্তী কালে অন্য কেউ তাতে সংযোজন ঘটিয়ে থাকুন, সীতার করুণ পরিণতিও সমান ভাবে আলোচিত হওয়া উচিত। কেন রামরাজ্যে জায়গা হল না তাঁর? কেন তাঁকে পাতাল প্রবেশ করতে হল?’’