পোস্টের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন যাঁরা— বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য (বাঁ দিকে) এবং তথাগত রায়। —ফাইল চিত্র।
নাম না-করে সন্দেশখালিকাণ্ডে তৃণমূল নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে সমাজমাধ্যমে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছিল রাজ্য বিজেপি। কিন্তু সেই ব্যঙ্গচিত্রে শালীনতার ‘লক্ষ্মণরেখা’ অতিক্রমের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠে হিন্দু ভাইবোনেদের ভাবাবেগে আঘাত করারও। দলের অন্দরে এবং বাইরে বিতর্ক ক্রমশ মাথাচাড়া দেওয়ার পরেও অবশ্য সেই পোস্ট ছিল। তবে সোমবার সকালে সারদা দেবীর ‘অবমাননামূলক’ সেই পোস্ট রাজ্য বিজেপির এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে দেখা যায়নি। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, বিতর্কের মুখে সেটি মুছে ফেলা হয়েছে।
বিজেপির এক্স হ্যান্ডলে করা এই পোস্ট নিয়ে আগেই সরব হয়েছিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগ এনে তাদের তরফে বলা হয়, ‘‘আর কত দিন আমাদের হিন্দু ভাই-বোনদের আবেগ নিয়ে খেলা করবে বিজেপি? মা সারদা দেবীর ব্যঙ্গচিত্র করে তাঁকে পরিহাস করা হয়েছে, যা খুবই নিচু কাজ। এমনকি, বিজেপির জন্যও!’’ এই নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন রাজ্যের অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ধর্মের মেরুকরণ করতে আজ বিজেপি কতটা নীচে নামতে পারে, সেটা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল। হিন্দু-মুসলমান বা অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের প্রতি বিজেপির যে মানসিকতা, তা ন্যক্কারজনক। এই ন্যক্কারজনক মানসিকতা প্রকাশ করতে এ বার ব্যবহার করা হল মা সারদা দেবীকে।’’
সমালোচনার সুর শোনা যায় বিজেপির অন্দর থেকেও। বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য সমাজমাধ্যমের এই পোস্ট নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘ছিঃ! এই পোস্ট হতে পারে, বিজেপির পক্ষ থেকে ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। যারা এটা করেছে, আমার মনে হয় তাদের রাজনীতি কেন, কোনও নীতিতেই থাকা উচিত নয়।’’ পোস্টে যে দুই তৃণমূল নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে মনে করছে রাজ্যের শাসকদল, সেই মদন মিত্র এবং ফিরহাদ হাকিমের পরিবারের কাছেও ক্ষমা চেয়ে নেন শমীক। তিনি বলেন, ‘‘এখানে যে পরিবারের কথা বলা হয়েছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে, যদি তাঁরা কেউ আঘাত পান, তা হলে সেই পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইছি। গোটা পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’ মুখপাত্র ওই পোস্ট নিয়ে দুঃখপ্রকাশ এবং ক্ষমা চাওয়ার পরেও সেটি রাজ্য বিজেপির ‘অফিসিয়াল’ এক্স হ্যান্ডলে ছিল।
রবিবার এই বিষয়ে নিজের মতামত জানিয়ে দলের ‘গুপ্তচর’দের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায়। এক্স মাধ্যমেই তিনি লেখেন, ‘‘২০২১ সালে বিজেপির মধ্যে এক শিম্পাঞ্জির নেতৃত্বে পালে পালে মুলো এবং সিপিএম গুপ্তচর, এমনকি প্রকাশ্য চর, ঢুকে দলের সর্বনাশ করেছিল। তাদের কয়েক জন এখনও বিজেপিতে থেকে গিয়েছে মনে হয়!’’ মনে করা হয়, ‘মুলো’ বলতে তৃণমূলের কথা বলেছেন তথাগত।
কিন্তু কী ছিল ওই বিতর্কিত পোস্টে? সন্দেশখালিকাণ্ডের শুরু থেকেই বিজেপির অভিযোগ, সেখানে মহিলারা নির্যাতিত হয়েছেন। বিশেষত ‘হিন্দু’ মহিলারা। অভিযোগ, তার নেপথ্যে ছিলেন তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও আনে বিজেপি। তা নিয়েই গত বৃহস্পতিবার একটি ব্যঙ্গচিত্র রাজ্য বিজেপির এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করা হয়। ওই ব্যঙ্গচিত্রে দেখা গিয়েছে, সবুজ পাড়-সাদা শাড়ি পরে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছেন এক মহিলা। তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, ওই মহিলার বসার ভঙ্গিমা সারদা দেবীর মতো। মুখের আদলের সঙ্গে মিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হাতে ফোন, পায়ে চটি। ব্যঙ্গচিত্রে ‘সংখ্যালঘু তোষণ’-এর অভিযোগ করা হয়েছে। ভোটের জন্য সে সব করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে ‘মদন’ এবং ‘হাকিম’ শব্দও। লেখা হয়েছে, ‘‘আমি মদনেরও মা। আমি হাকিমেরও মা।’’ তার পরেই লেখা, ‘‘ভোটের জন্য আমি অন্য দিকে তাকাই, যখন মদনের স্ত্রী হাকিম দ্বারা ধর্ষিত হয়।’’ তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, রাজ্যের বিধায়ক মদন এবং মন্ত্রী ফিরহাদকে নিয়ে এই ইঙ্গিত করা হয়েছে।