গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বাংলায় ভোট পরবর্তী ‘সন্ত্রাস’ দেখতে এসে দলের কোন্দল দেখল বিজেপির কেন্দ্রীয় দল। তা-ও আবার সেই কোন্দলের ঘটনা ঘটল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে। মঙ্গলবার সকালে আমতলায় বিপ্লব দেবদের গাড়ি থামিয়ে জেলা সভাপতি অভিজিৎ সর্দারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা। গাড়িতে বসেই স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এ বার লোকসভায় জেতা বিপ্লব, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদেরা। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল আমতলা ছেড়ে গোসাবার দিকে রওনা হওয়ার পরেই স্থানীয় পার্টি অফিসে তালা লাগিয়ে দেন বিক্ষুব্ধেরা। জেলা সভাপতির অনুগামীদের সঙ্গে তাঁদের হাতাহাতিও হয় বলে খবর।
বিজেপির অভিযোগ, ভোটের পর থেকে সারা রাজ্যে তাদের কর্মীদের উপর নির্বাচারে আক্রমণ শানাচ্ছে তৃণমূল। পাল্টা শাসকদলের দাবি, বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলে যা ঘটছে, তা তৃণমূলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলার পরিস্থিতি পরিদর্শনের জন্য গত রবিবার রাজ্যে আসে বিপ্লবের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় বিজেপির দল। সোমবার তাঁরা গিয়েছিলেন কোচবিহারে। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার যখন বিপ্লবেরা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন তখন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কোচবিহারে। মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরে বিজেপির টিকিটে রাজ্যসভায় যাওয়া অনন্ত মহারাজের প্রাসাদে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা।
আমতলা, গোসাবা হয়ে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতেও যায় কেন্দ্রীয় বিজেপির দলটি। পরিস্থিতি দেখে বিপ্লব বলেছেন, ‘‘বাংলার যে ভয়াবহ চিত্র দেখলাম তা কোনও সভ্য দেশে চলতে পারে না। সমগ্র রিপোর্ট আমরা সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে জমা দেব।’’
আমতলার বিক্ষোভ
ভোট পরবর্তী ‘হিংসার শিকার’ বিজেপি কর্মীদের একাংশ আশ্রয় নিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের পরাজিত পদ্মপ্রার্থী অভিজিৎ দাস (ববি)-এর বাড়িতে। মঙ্গলবার জেলারই বিষ্ণুপুরের দলীয় দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে এলাকা পরিদর্শনে বার হন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যেরা। বিজেপি সূত্রে জানা যায়, তাঁদের পরবর্তী গন্তব্য আলতাবেড়িয়া। কিন্তু রাস্তায় হাত দেখিয়ে বিপ্লবদের গাড়ি থামান দলেরই কর্মী-সমর্থকেরা। মহিলাদের একাংশ গাড়ি থেকে তাঁকে নেমে আসার অনুরোধ জানান। এর পাশাপাশি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অভিজিতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁরা দাবি করেন, ৪ জুন ভোটের ফলপ্রকাশের পর আক্রান্ত কর্মীদের খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অভিজিতের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলারও অভিযোগ তোলেন বিক্ষোভকারীরা।
কেন নেই রাজ্য নেতারা
বিক্ষোভ থেকে বিজেপি কর্মীরা এই প্রশ্নও তুলেছেন, কেন রাজ্যস্তরের প্রথমসারির নেতাদের দেখা যাচ্ছে না? তাঁরা কোথায়? এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয়দলের সঙ্গে থাকা রাজ্য বিজেপির অন্যতম নেত্রী তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেছেন, ‘‘সব সময়ে রাজ্যের নেতারা সব জায়গায় যাবেন এটা তো হতে পারে না। এটা একটা বড় লড়াই, স্বাধীনতার লড়াইয়ের মতো। ধৈর্য ধরেই তা লড়তে হবে।’’
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ
বিজেপির কেন্দ্রীয় দলের অভিযোগ, জেলায় জেলায় তাদের কর্মীরা ঘরছাড়া। পুলিশে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না। বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, ‘‘পুলিশের মদতেই নির্মম সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল।’’ এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে বিপ্লব লিখেছেন, ‘‘গোসাবায় বৃদ্ধ বিজেপি সমর্থকের দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তাঁর ছেলে ঘরছাড়া। মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজত্বে তফসিলি মহিলারাই আক্রান্ত।’’
পাল্টা তোপ তৃণমূলের
আমতলার ঘটনা নিয়ে বিজেপিকে তোপ দেগেছে তৃণমূল। শাসদকদলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপির দল দেখল তাদেরই কোন্দল। পার্টি অফিসে তালা দিচ্ছেন বিজেপির কর্মীরাই। এতে তৃণমূল কী করবে?’’ কুণালের নিশানায় ছিলেন বিপ্লবও। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে ‘সন্ত্রাসের অপর নাম’ বলে তোপ দাগেন কুণাল।
সন্দেশখালিতে প্রতিনিধিদল
বসিরহাট লোকসভার সন্দেশখালির বেড়মজুর গ্রামে যায় কেন্দ্রীয় বিজেপির দল। যে বেড়মজুর একটা সময়ে রোজ সংবাদ শিরোনামে থাকত। পদ্মশিবিরের অভিযোগ, সন্দেশখালির বিস্তীর্ণ এলাকায় তৃণমূলের অত্যাচারে বিজেপি কর্মীরা বিপন্ন। বসিরহাটের পরাজিত পদ্মপ্রার্থী রেখা পাত্রও ছিলেন সেখানে। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় দল সেখানে যাওয়ায় বিজেপির কর্মীরা কিছুটা হলেও সাহস পাবেন।