তৃণমূলের প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদনপত্র জমা দিলেন এক ব্যক্তি। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলে ‘চল’টা ছিলই। কোনও নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে চেয়ে ‘জীবনপঞ্জি’ জমা দেওয়া যেত দলের কাছে। তবে এত দিন সেই ‘জীবনপঞ্জি’ জমা দিতে হত তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ি লাগোয়া তাঁর কার্যালয়ে। কিন্তু এ বার সেই ‘ইচ্ছাপত্র’ জমা দেওয়ার জন্য বাক্স বসানো হল তৃণমূল ভবনে। এবং প্রথম দিন অর্থাৎ শনিবার সেই বাক্সে প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমাও দিলেন নদিয়ার এক ব্যক্তি। তিনি পলাশিপাড়া থেকে ভোটে লড়তে চান তৃণমূলের হয়ে।
২০১৬-র নির্বাচনেও ‘জীবনপঞ্জি’ জমা দেওয়ার এমন ব্যবস্থা ছিল দলনেত্রীর বাড়ির কার্যালয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর সেই অফিসের দায়িত্বে থাকা সদ্য প্রয়াত মানিক মজুমদারের হাতেও অনেকে জীবনপঞ্জি দিয়ে আসতেন। কিন্তু কোভিড-পরিস্থিতিতে এ বার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ভিড় কমাতেই তৃণমূল ভবনে জীবনপঞ্জি জমা দেওয়ার বাক্স বসানো হয়েছে বলেই জানাচ্ছেন তৃণমূলের এক নেতা। সেই বাক্সের গায়ে লেখা হয়েছে, ‘বায়োডেটা ফর অ্যাসেম্বলি ইলেকশন ২০২১’। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বলেন, ‘‘কর্মী বা নেতাদের রাজনৈতিক খিদে কখনও অন্যায় নয়। তাই দলের এই বন্দোবস্ত সম্পূর্ণ যুক্তিপূর্ণ।’’
শনিবার ওই বাক্সে নিজের জীবনপঞ্জি জমা দিয়েছেন নদিয়া থেকে আসা শেখ দৌলত হুসেন। তিনি পলাশিপাড়া বিধানসভায় প্রার্থীপদের জন্য আবেদন করেছেন। পলাশিপাড়ার বর্তমান বিধায়ক তৃণমূলেরই তাপস সাহা। তা সত্ত্বেও তিনি কেন জীবনপঞ্জি জমা দিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে দৌলত বলেন, ‘‘বর্তমান বিধায়ক বহিরাগত। তিনি তেহট্ট থেকে এসে পলাশিপাড়ার বিধায়ক হয়েছেন। তাই ভূমিপুত্র হিসেবে আমি আবেদন করেছি। দল যখন আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে, তখন আমি সেই সুবিধা নেব না কেন?’’
শুধু জীবনপঞ্জি জমা দেওয়াই নয় শনিবার তৃণমূল ভবনে এমন চারটি বাক্স বসানো হয়েছে। তার মধ্যে তিনটে ছোট এবং অন্যটি তাদের থেকে সামান্য বড়। একটি বাক্স জীবনপঞ্জির জন্য আর বাকি তিনটিতে জমা দেওয়া যাবে অনুদান। চেক, নগদ এবং বন্ডের মাধ্যমে দলকে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য অনুদান দেওয়া যাবে।
প্রকাশ্যে অনুদান গ্রহণের এমন উদ্যোগ তৃণমূলে যদিও এই প্রথম। কারণ, এর আগে কখনও এ ভাবে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে আর্থিক সাহায্য চায়নি দল। চেক জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্যান কার্ড ও আধার কার্ডের নম্বর উল্লেখ করা যে বাধ্যতামূলক, তা বাক্সের গায়েই লেখা হয়েছে। নগদ ও বন্ডের ক্ষেত্রে তেমন কিছু লেখা হয়নি। যদিও তৃণমূলের ওয়েবসাইটে যাবতীয় নিয়মনীতির উল্লেখ করে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়েছিল গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে। এ বারও ওয়েবসাইটে রাজনৈতিক দলকে অনুদান দেওয়ার আইনের কথা সবিস্তার উল্লেখ করেই আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ‘আয়কর আইন ১৯৬১’ ও ‘কর্পোরেট আইন ২০১৩’-র কথা উল্লেখ করা হয়েছে।