বিহারের বাসিন্দা প্রমোদকুমার মেহতা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মাত্র ১০ টাকা খরচে মিলবে শান্তিপুরী তাঁতের শাড়ি। ১০০ টাকায় জামদানি! ইউটিউবে এমনই লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে শান্তিপুরের একটি শাড়ির দোকানে এসে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করলেন বিহারের ব্যবসায়ী। তাঁর আরও দাবি, শাড়ি না কিনলে তাঁকে আটকে রাখার হুমকি দেন ওই দোকানের কর্মীরা। প্রাণভয়ে টাকার ব্যাগ রেখেই দোকান থেকে পালিয়ে আসেন তিনি। বুধবার সকালে এই অভিযোগে থানার দ্বারস্থ হয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি। যদিও ওই দোকানের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
বিহারের সুপল জেলার বাসিন্দা প্রমোদকুমার মেহতার দাবি, ইউটিউবে নানা চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে নদিয়ার শান্তিপুরের গোবিন্দপুরে একটি শাড়ির দোকানে ফোন করেন তিনি। ইচ্ছে ছিল, এখান থেকে সস্তায় শাড়ি কিনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করবেন। দু’পয়সা রোজগারের আশায় ট্রেনে করে বিহার থেকে বুধবার সকালে শান্তিপুরে আসেন তিনি।
প্রমোদের আরও দাবি, দোকানে গেলে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। এমনকি, সকালে চা-জলখাবারেরও ব্যবস্থা করেন দোকানমালিক। তবে শাড়ি দেখেই চোখকপালে হওয়ার জোগাড়! ঝাঁ-চকচকে বিজ্ঞাপনের তুলনায় দোকানের শাড়ির মান অত্যন্ত নিম্নমানের। তাঁকে বহু পুরনো শাড়ি দেখানো হয় বলে অভিযোগ প্রমোদের। ফলে ওই দোকানের শাড়ি কিনতে রাজি হননি তিনি। শাড়ি কিনতে অসম্মত হওয়ায় তাঁকে অকথ্য গালিগালাজ করা হয়। এমনকি, আটকে রাখার হুমকিও দেওয়া হয়। দোকানকর্মীরা মারধর করতে উদ্যত হলে কোনও রকমে পালিয়ে এলাকার এক জনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। প্রমোদের কথায়, ‘‘ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দেখামাত্রই ফোন করে শাড়ির দোকানে গিয়েছিলাম। তবে দোকানে যেতেই শাড়ির কেনার জন্য জোরজবরদস্তি করতে থাকেন কর্মীরা। পছন্দ না হলেও শাড়ি নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে থাকে। আমাকে জাপ্টে ধরে ফেলে ওঁরা। বলতে থাকে, ‘আরও দু’জন লোক রয়েছে। টাকা না দিলে ছাড়ব না, ওঁদের সঙ্গেই আটকে রাখব।’ প্রাণে বাঁচতে আধার, প্যান, এটিএম কার্ড আর পনেরোশো টাকাভর্তি ব্যাগ ছেড়েই কোনও রকমে পালিয়ে আসি।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকার বাসিন্দাদের পরামর্শে শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রমোদ। তাঁর টাকাসমেত ব্যাগটি উদ্ধার করেছে শান্তিপুর থানা।
এ ধরনের ঘটনায় এলাকার ব্যবসায়ীদের রুজিরুটিতে আঘাত হানতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী সুবিরেশ রায়। তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনার জেরেই ক্রেতার সংখ্যা ক্রমশই কমছে। প্রশ্ন উঠছে বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অবিলম্বে এ ধরনের বিজ্ঞাপনের উপর নিয়ন্ত্রণ তথা বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করুক পুলিশ-প্রশাসন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর।’’ যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই শাড়ির দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।