বিরোধীদের ঐক্য বৈঠক ডাকুন, নবান্নে নীতীশ-তেজস্বীর সঙ্গে বৈঠকে বললেন মমতা। ফাইল চিত্র।
পাখির চোখ আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বিরোধী জোট গঠনের প্রস্তুতি হিসাবে নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বী যাদবও। বৈঠক শেষে মমতা এবং নীতীশ দু’জনেই বিরোধী ঐক্য আরও জোরদার করার ডাক দেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে মমতা সরাসরি নীতীশকে বিরোধীদের নিয়ে বৈঠক ডাকার প্রস্তাব দেন। প্রয়াত জয়প্রকাশ নারায়ণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতা বলেন, “নীতীশজিকে অনুরোধ করছি, আপনি পটনায় একটা বিরোধী বৈঠক ডাকুন।” বিরোধী জোটের নেতা হিসাবে কাউকে মেনে নিতে তাঁর যে আপত্তি নেই, সে ইঙ্গিত দিয়ে মমতা বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনও ইগো নেই। আমরা সবাই এক।” একই সঙ্গে বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “বিজেপি হিরো হয়ে গিয়েছে, জ়িরো হয়ে যাবে।” পাঠ্যসূচি পরিবর্তন- সহ একাধিক বিষয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন নীতীশও।
বিরোধীরা যে এক ছাতার তলায় আসতে প্রাথমিক কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছে, সেই ইঙ্গিত দিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী, প্রবীণ জেডি(ইউ) নেতা বলেন, “আমাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়েই থাকে। আর অনেক দিন পর এখানে আসার সুযোগ হল।” বৈঠককে ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করেন তিনি।
রবিবারই সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর মিলেছিল, মঙ্গলবার দুপুর ২টোয় রাজ্যের প্রশাসনিক দফতর নবান্নে বৈঠকে বসবেন দুই মুখ্যমন্ত্রী। পরে রাতের দিকে নবান্ন সূত্রে খবর পাওয়া যায়, মঙ্গলবার নয়, নীতীশ এবং মমতার বৈঠক সোমবারই হবে। সেই মতোই সোমবার বেলার দিকে দমদম বিমানবন্দরে নামে নীতীশের বিমান। সঙ্গে ছিলেন তেজস্বীও। দুপুর ২টো নাগাদ নবান্নে শুরু হয় বৈঠক। তার আগে পুষ্পস্তবক দিয়ে নীতীশ-তেজস্বীকে স্বাগত জানান মমতা।
সম্প্রতি দিল্লি সফরে গিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন নীতীশ। রাজধানীতে দাঁড়িয়ে নীতীশ জানিয়েছিলেন, বিরোধী জোট গঠনের উদ্দেশ্যে তিনি সব নেতানেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। ওই সফরে নীতীশের সঙ্গে দেখা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। বিরোধী জোট নিয়ে বাম নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও কথা বলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তবে সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় আলাদা করে উল্লিখিত হয় মমতা এবং অখিলেশের কথা। কারণ, বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে তাঁদের অবস্থান সুস্পষ্ট হলেও বিরোধী জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল তৃণমূল এবং সপা। রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের পর অবশ্য খড়্গের ডাকা বিরোধীদের বৈঠকে প্রতিনিধি পাঠায় তৃণমূল। ইদানীং বিজেপির বিরুদ্ধে সকলকে এক হওয়ার বার্তা দিতে দেখা যাচ্ছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকেও। তিনি বহু বার জানিয়েছেন, বিরোধী দলগুলি এক হলে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবে না। সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনকে ফোন করেছিলেন মমতা। ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন নিজেই টুইট করে সে কথা জানান। এই আবহেই নবান্নে নীতীশ-তেজস্বীর সঙ্গে বৈঠক করলেন মমতা।