দুই পুরসভার ভোট এগিয়ে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।—ফাইল চিত্র।
এগিয়ে আসতে পারে বিধাননগর এবং আসানসোল পুরসভার ভোট। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ওই দুই পুরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই এপ্রিলে কলকাতা-সহ অন্যান্য পুরসভার সঙ্গে বিধাননগর-আসানসোলের ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী ১৭ জানুয়ারি ৯৩টি পুরসভার আসন সংরক্ষণ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি (খসড়া তালিকা) প্রকাশ হতে চলেছে। ওই তালিকায় বিধাননগর এবং আসানসোল পুরসভাও রয়েছে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। সে কারণেই ওই দুই পুরসভার ভোট এগিয়ে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কমিশনের এক আধিকারিক বলেন, “ওয়ার্ড সংরক্ষণ নিয়ে যখন খসড়া রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে, তখন নির্বাচনের একটা ইঙ্গিত তো রয়েছে। নির্বাচন হতে পারে, কমিশনও তৈরি হয়েছে।”
বিধাননগর পুরসভার মেয়রের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সব্যসাচী দত্ত বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই ওই এলাকায় তাঁর দল প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছে। অন্য দিকে, আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির সামনেও কঠিন লড়াই। ক্রমশই সেখানে বিজেপির হাত শক্ত হচ্ছে।এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোটের আগে দুই পুরসভার নির্বাচনের ফলের কথা মাথায় রেখে, তৃণমূল কোনও ‘ঝুঁকি’ নিতে চাইবে না বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। ফল খারাপ হলে বিজেপি-সহ বিরোধী দল প্রচারের অস্ত্র পেয়ে যাবে। নির্বাচন এগিয়ে এলেলাভই দেখছে তৃণমূলের একাংশ।
নির্বাচন যখনই হোক না কেন, সব সময় প্রস্তুত বলে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল এবং বিজেপি দু’পক্ষই। পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের নিয়ন্ত্রক তথা আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেছেন, “আমাদের কাছে নির্বাচন এগিয়ে আসার খবর নেই। নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে বলে আমরা জানি। কিন্তু নির্বাচন যখনই হোক, আমাদের জন্য তা আলাদা কিছু নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো আমরা সারা বছরই মানুষের জন্য কাজ করি, মানুষের পাশে থাকি। তাই নির্বাচনের জন্য আমরা সব সময়েই প্রস্তুত।”
নির্বাচন এগিয়ে আসার সম্ভাবনার প্রশ্নে বিজেপির প্রতিক্রিয়াও ঠিক একই রকম। বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র তথা রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘নির্বাচন এগনোর বিষয়ে কিছু এখনও জানি না। যতক্ষণ না হাতে কাগজ পাচ্ছি, তত ক্ষণ বলতে পারব না। তবে যখন হবে হোক, আমাদের কোনও অসুবিধা নেই।’’
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, আসন সংরক্ষণ নিয়ে খসড়া বিজ্ঞপ্তি জারির ৭০ দিন পর ভোট করাতে আইনি বাধা নেই। মার্চ মাসে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও শেষ হয়ে যাবে। ফলে এপ্রিলের শুরুতে ভোট হতে কোনও বাধাই থাকছে না। সংরক্ষণের চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হতে পারে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি। তার পরই ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি, এনআরপি বিতর্কের মাঝে এ বারের পুর নির্বাচন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২১ সালের বিধানসভার আগে পুর নির্বাচনে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে কারা শক্তমাটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ঠিক একই কারণে কলকাতার কাউন্সিলরদেরও তৈরি থাকতে বলেছেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অন্যান্য পুরসভার থেকে কলকাতায় আবার শক্ত জমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে তৃণমূল। কলকাতার ভোটে ফল ভাল হলে, তার পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে বাকি পুরসভাগুলিতেও। দলীয় কর্মীদের মনবলও চাঙ্গা হবে। তাই এপ্রিলের শুরুতেই ভোট চাইছে তৃণমূল।
ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মধ্যে বেশ কয়েকবার চিঠি চালাচালি হয়েছে। সিউড়ি ও বোলপুর পুরসভার ‘ডিলিমিটেশন’ বা সীমানা পুনর্বিন্যাস করার কথাও ছিল চিঠিতে। ২০১৮ সালে হাওড়া-সহ ১৭টি নির্বাচিত পুর বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছিল। এপ্রিলে ওই পুরসভাগুলিতেও ভোটের সম্ভাবনা রয়েছে।