State News

বাংলোর গেটে স্থায়ী শৌচালয়, গোসা বিদ্যুৎমন্ত্রীর

গঙ্গাসাগরের পুণ্যার্থীদের জন্য এ বারেই প্রথম স্থায়ী শৌচালয় তৈরি করিয়েছে সরকার।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

গঙ্গাসাগর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:২৫
Share:

সেই শৌচালয়। নিজস্ব চিত্র

অতিথিরা এলে নাক সিঁটকোন। সাধের বারান্দায় দাঁড়ানো যায় না। বাগানে হাঁটাও দুষ্কর। সাগরমেলায় বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বাংলোর এই হাল কেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কারণ, মন্ত্রীর বাংলোর গেটের সামনেই সারি সারি স্থায়ী শৌচালয় তৈরি করে দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। ক্ষুব্ধ মন্ত্রী সেগুলো দ্রুত ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। আপাতত ‘দৃশ্যদূষণ’ আটকাতে বাংলোর সামনের সেই শৌচালয়গুলি জেলা প্রশাসনের তরফে ঢেকে দেওয়া হয়েছে নীল-সাদা কাপড় দিয়ে!

Advertisement

গঙ্গাসাগরের পুণ্যার্থীদের জন্য এ বারেই প্রথম স্থায়ী শৌচালয় তৈরি করিয়েছে সরকার। তার নির্মাণকাজ করিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। এই নিয়ে মেলা-চত্বরে তো বটেই, রাজ্য জুড়েও প্রচার চালানো হয়েছে। তার মধ্যে ২২০টি স্থায়ী শৌচালয় তৈরি করানো হয়েছে শোভনদেববাবু গঙ্গাসাগরে যেখানে ওঠেন, বিদ্যুৎ দফতরের সেই বাংলোর ঠিক সামনের ফাঁকা জমিতে। ৩০ ডিসেম্বর সাগরে এসে ব্যাপারটা প্রথম লক্ষ করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। ২২০টি শৌচালয়ের মধ্যে তখনও বেশ কয়েকটির উপরে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়নি। সে-দিনই স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে শৌচাগারগুলি দ্রুত ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন শোভনদেববাবু।

তবে তার পরেও শৌচালয়গুলির অবস্থান বদল হয়নি। মেলা উপলক্ষে শোভনদেববাবু ১৪ জানুয়ারি ফের গঙ্গাসাগরে আসেন। বার বার বলা সত্ত্বেও শৌচালয় সরানো হয়নি দেখে তিনি এ বার সরাসরি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসক পি উলগানাথনকে সেগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। বুধবার, সাগরস্নানের দিনেও এই নিয়ে শোরগোল চলে মেলা-চত্বর এবং মেলা অফিস ঘিরে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “ওখানে তো প্রতি বারেই অস্থায়ী শৌচালয় তৈরি করানো হয়। এ বার সেটাকে স্থায়ী করায় এত কথা উঠছে। উনি (শোভনদেববাবু) যা-ই বলুন, স্থায়ী শৌচালয় গড়ার কাজটা হয়েছে সরকারি নির্দেশে। বহু মন্ত্রী ওখানেই স্থায়ী শৌচালয় তৈরির পক্ষে।”

Advertisement

আরও পড়ুন: ঝঞ্ঝায় শীত উধাও, ফিরবে কি না প্রশ্ন

এ দিন গিয়ে দেখা গেল, নানান ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে বিদ্যুৎ দফতরের নীল-সাদা বিশাল বাংলো। ফটকের ঠিক উল্টো দিকের ফাঁকা জমি জুড়ে সারি সারি ঘর। সিমেন্টের বাঁধুনির উপরে টিনের চাল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে শৌচালয়। প্রতিটির গায়ে পরপর নম্বর লেখা। আলাদা ভাবে স্নানের জায়গাও করা হয়েছে সেখানে। সেই স্নানের জায়গাই মেলায় আসা পুণ্যার্থীদের বড় ভরসা। বাস ধরার তাড়ায় থাকা এক ব্যক্তি শৌচাগারের বাইরে দাঁড়িয়েই স্নান করতে করতে বললেন, “ভিতরে খুব ভিড়। তাই বাইরেই সেরে নিচ্ছি। আসলে বাস ধরতে হবে তো!’’

শৌচাগার-স্নানের জায়গা আমজনতার কাজে লাগছে ঠিকই। কিন্তু মন্ত্রীর উষ্মা প্রশমনের লক্ষণ নেই। শোভনদেববাবু বললেন, “এটা কখনও করা যায়? আমার বাংলোর মুখ আটকে করেছে বলে বলছি না। আমার ঘরের বাইরের বারান্দায় দাঁড়ালেই শৌচাগারগুলো পরিষ্কার বোঝা যায়। বারান্দাটাই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কে কী উদ্দেশ্যে এটা করেছে, সেই বিষয়ে কিছু বলার নেই। তবে জেলাশাসক বলেছেন, ওই শৌচালয়গুলো ভেঙে দেওয়া হবে মেলা সাঙ্গ হলেই।” জেলাশাসক উলগানাথন জানান, মেলা মিটলে বিষয়টি দেখে পদক্ষেপ করা হবে।

গঙ্গাসাগর এলাকার সিপিএম নেতা চিত্তরঞ্জন প্রধানের প্রশ্ন, “তা হলে কি আবার টাকা খরচ করে অন্য কোথাও শৌচালয় গড়া হবে?”প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই বাংলোর কাছে ১৫০০ বর্গ মিটারের একটি জায়গা তৈরি করা হয়েছে বর্জ্য ফেলার জন্য। সাগরমেলার বর্জ্যের অনেকটাই ফেলা হচ্ছে সেখানে। ২২০টি শৌচাগার এবং বর্জ্য ফেলার ওই জায়গা তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। সেগুলো ভেঙে ফেললে পুরো টাকাই জলে যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement