নববর্ষের শুভেচ্ছায় বিতর্ক, পিছোলেন ধনখড়

রাজভবনের যে টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে এই শুভেচ্ছাবার্তার শুটিং করলেন তিনি, সেই টেবিলে যেখানে বঙ্গভঙ্গ চুক্তিতে সই করেছিলেন লর্ড কার্জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৩
Share:

ছবি: পিটিআই।

‘বঙ্গভঙ্গ’ ঠিক কীসের ইতিহাস— অহঙ্কারের, উদ্‌যাপনের, না আঘাতের? ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে রাজ্যবাসীকে মঙ্গলবার এই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

Advertisement

রাজভবনের যে টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে এই শুভেচ্ছাবার্তার শুটিং করলেন তিনি, সেই টেবিলে যেখানে বঙ্গভঙ্গ চুক্তিতে সই করেছিলেন লর্ড কার্জন। সে কথা টুইট করে জানিয়ে ধনখড় নিজেই বলেছন, ‘‘রাজভবনের ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগারের প্রবাদপ্রতিম (আইকন) টেবিলে বসে নববর্ষের শুভেচ্ছাবার্তা রেকর্ড করছি। ১৯০৫ সালে এখানেই লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের কাগজে সই করেছিলেন।’’

সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্যপালের এই ঘোষণা নজরে আসার পর থেকেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রবল চাপে শেষপর্যন্ত ওই বক্তব্য প্রত্যহার করে রাতে ফের টুইট করেন ধনখড়।

Advertisement

আরও পড়ুন: দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসে বাদ বাংলার ট্যাবলো

তবে রাজনৈতিক স্তরে তো বটেই দলীয় বৃত্তের বাইরে থাকা বিশিষ্ট বাঙালিরাও রাজ্যপালের বঙ্গভঙ্গ সংক্রান্ত বক্তব্যে বিস্মিত। রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘রাজ্যপাল বঙ্গভঙ্গের ইতিহাসকে কীভাবে ব্যাখ্যা করতে চান, তা ভেবেই অবাক হয়ে যাচ্ছি! যখন ভারতবাসী হিসেবে প্রতিটি মুহূর্ত আঞ্চলিক, ধর্মীয় বিভাজনের আতঙ্কে আছি তখন বঙ্গভঙ্গের স্মৃতি তিনি কীভাবে এবং কেন মনে করাতে চাইছেন কে জানে!’’ শুধু তাই নয়, দেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার দিকে ইঙ্গিত করে ব্রাত্য বলেন, ‘‘কার্জনের স্বরাষ্ট্র বিভাগের দায়িত্বে থাকা হারবার্ট রিজলির কথা মনে পড়ছে। গত শতাব্দির কুখ্যাত নাগরিক পঞ্জি তৈরি হয়েছিল তাঁর হাতেই। তার পরেই বঙ্গভঙ্গের কথা ঘোষণা করেছিলেন কার্জন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আন্দোলন ও সংঘর্ষের সামনে রিজলির নাগরিক পঞ্জি প্রত্যাহার করতে হয়েছিল, আমাদের এই রাজ্যপাল নিশ্চই সেই ইতিহাসও জানেন।’’

ইতিহাসবিদ সুগত বসু বলেন, ‘‘রাজ্যপাল কী বলেছেন, তার মধ্যে না গিয়েই এটুকু বলতে পারি, সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধি লর্ড কার্জন কারও কারও কাছে ‘আইকন’ হতে পারেন। কিন্তু আমাদের যাঁরা আদর্শ, যাঁরা মনীষী এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্বসূরী আমরা তাঁদেরই ‘আইকন’ বলে মনে করি। বঙ্গভঙ্গের ইতিহাস যাঁরা জানেন তাঁরা এর বিরুদ্ধে সুরেন্দ্রনাথ থেকে রবীন্দ্রনাথ সকলের ভূমিকাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বাঁলা ও বাঙালির কাছে তাঁরাই ‘আইকন।’ কার্জন নন। টেবিল তো দূরের কথা।’’

টুইটবার্তায় প্রকাশিত তাঁর ‘অনুভূতি’ নিয়ে ধনখড়কে চড়া সুরে আক্রমণ করে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘রাজ্যপাল যদি কার্জনের টেবিল নিয়ে গর্ব ও আনন্দ বোধ করেন তবে সেই শুভেচ্ছাবার্তা ছিঁড়ে ফেলা উচিত। বঙ্গভঙ্গ নিয়ে গর্বিতদের বাঙালি কুলাঙ্গার মনে করে। মনে রাখা উচিত, রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে জনজাগরণ কার্জনের সেই উদ্যোগ রুখে দিয়েছিল। পরে তা কার্যকর করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বাঙালির কাছে তাঁরা প্রত্যাখ্যাত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement