ফাইল চিত্র।
নিজেদের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। শনিবার সকালে নিজেদের মধ্যে বৈঠকের পর আন্দোলনকারীদের সংগঠন জানিয়ে দিল, আপাতত নবান্নে যাচ্ছেন না তাঁরা। তাঁদের দাবি, রাজ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীই দায়ী। তাই তাঁকেই আসতে হবে এনআরএসে। তাঁদের আরও দাবি, এনআরএসে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে ডাক্তারদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ডাক্তারদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। ইতিমধ্যে জট কাটাতে তৎপর হয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। শনিবার সকালেই কলকাতায় এসে পৌঁছছেন আইএমএ-র সর্বভারতীয় সভাপতি শান্তনু সেন। এনআরএসে পৌঁছেছেন তিনি। এনআরএসের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। তারপর জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন বলে জানা গিয়েছে।
এই নিয়ে চার দিনে পড়ল জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল এনআরএস হাসপাতালে না যাওয়া নিয়ে এমনিতেই জটিলতা ছিল। উল্টে এসএসকেএমে গিয়ে ডাক্তারদের প্রতি তাঁর ‘হুমকি’ এবং ‘দুর্ব্যবহার’-এর জেরে বৃহস্পতিবার থেকে স্বাস্থ্য সঙ্কট আরও গভীরতর হয়েছে। তার উপর শুক্রবার বিকেলে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ফের আক্রান্ত হন এক জুনিয়র ডাক্তার।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করলেও এর আগে পর্যন্ত সিনিয়র ডাক্তাররাই যথাসম্ভব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সামলাচ্ছিলেন। সমস্যা আরও বাড়ে রাজ্য জুড়ে ডাক্তারদের গণইস্তফার ঢল নামায়। শুক্রবারই এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর হাসপাতাল এবং এনআরএস মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন চিকৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী পদত্যাগ করেছেন। ফলে এই হাসপাতালগুলো আংশিক খোলা থাকলেও চিকিৎসা প্রায় মিলছেই না। জেলার হাসপাতাগুলোরও একই হাল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ১১৯ জন চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন। মালদহ মেডিক্যালে ৩৬ জন চিকিৎসক অধ্যক্ষের মাধ্যমে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন। আইএমএ-র জেলা সম্পাদকের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের ৫০ জন চিকিৎসক। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার রাত পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন চিকিৎসক গণ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আগে যেটুকুও বা পরিষেবা পাচ্ছিলেন রোগীরা, ডাক্তারদের ইস্তফার কারণে সেটুকুও আর মিলছে না। ফলে চরম হয়রান হতে হচ্ছে রোগীদের। এ দিন কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের অনেক চিকিৎসকও ইস্তফা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
নবান্নে কি যাবেন জুনিয়র ডাক্তাররা, সিদ্ধান্ত আজ
বসুন ডাক্তারদের সঙ্গে, মমতাকে চিঠি ত্রিপাঠীর
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় অচলাবস্থা কাটাতে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন রাজ্যের পাঁচ প্রবীণ চিকিৎসক। মুখ্যমন্ত্রীকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ জানান তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকের জন্য সময় দিলেও নবান্নে যেতে রাজি হননি জুনিয়র ডাক্তাররা।
ডাক্তারদের এই আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। রাজ্যের সীমা ছাড়িয়ে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পর্যন্ত পোড়ানো হয়েছে। সোমবার ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।