মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।
বিজেপির বিরুদ্ধে সব বিরোধী দলের একজোট হয়ে লড়াইয়ের ডাক তিনি আগেই দিয়েছেন। এ বার বাংলার সিপিএম ও কংগ্রেসের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বান, তাদের কাছে প্রধান শত্রু কে, তা তাদেরই ঠিক করতে হবে। বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে ‘বড় শত্রু’ বেছে নেওয়ার কথাই বলেছেন তিনি।
দিল্লিতে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্তব্য, ‘‘বাংলায় কংগ্রেস এবং সিপিএমের যে অবস্থা হয়েছে, তার জন্য ওরাই দায়ী। ওদেরই ঠিক করতে হবে, প্রধান শত্রু কে? বিজেপি না তৃণমূল?’’ তৃণমূল নেত্রীর আরও সংযোজন, ‘‘কেরল যদি এটা ঠিক করতে পারে, বাংলাই বা পারবে না কেন?’’ মমতার মন্তব্যের এই অংশের ইঙ্গিত অবশ্য সিপিএমের দিকেই বলে মনে করা হচ্ছে।
সিপিএম এবং কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব এক সুরেই জানাচ্ছেন, গোটা দেশেই তাঁদের সামনে ‘প্রধান শত্রু’ বিজেপি। তবে বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়ার কথাও তাঁরা ভাবছেন না বলে ফের বুঝিয়ে দিয়েছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘গোটা দেশের যা পরিস্থিতি, প্রধান শক্র তো বিজেপিই। এই নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু বাংলায় যারা বিজেপিকে নিয়ে এসেছে, তাদের জায়গা করে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে রাজ্যে বোঝাপড়ার কথা আসছে না। এমন পরামর্শেরও প্রয়োজন নেই!’’ কেরলের উদাহরণ দিয়েই সিপিএম নেতৃত্বের পাল্টা বক্তব্য, দক্ষিণের ওই রাজ্যে সিপিএম ও কংগ্রেস পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আবার জাতীয় স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে তারা একজোট। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এটাই রাজনীতির ‘বাস্তবতা’।
কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘জাতীয় কংগ্রেস একটাই দল, বাংলা বলে আলাদা কিছু নেই। কংগ্রেস কোনও সময়েই বিজেপির মতো কোনও শক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেনি, তুলবেও না।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘নতুন কোনও সমীকরণ ( জোট সংক্রান্ত) তৈরি হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে এআইসিসি। তবে রাজ্যের যা পরিস্থিতি, তাকে কংগ্রেস অস্বীকার করে চলতে পারে না— এটাও মাথায় রাখা উচিত।’’
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পর্যালোচনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনই বলেছেন, ‘‘জাতীয় স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে সার্বিক ঐক্যের পক্ষপাতী আমরা সকলেই। কিন্তু রাজ্যে কি তার মানে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হবে? সম্পর্কের পরিবেশই তো এখানে ঠিক নেই। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করতে গেলেও তৃণমূলের সরকার গ্রেফতার করে। সম্পর্ক ঠিক করার কোনও বাতাবরণ যদি ভবিষ্যতে তৈরি হয়, তখন ভাবা যাবে।’’ নির্বাচনী পর্যালোচনার খসড়া রিপোর্টেও সিপিআইয়ের রাজ্য কার্যনির্বাহী কমিটি বলেছে, বিজেপিকে ঠেকাতে বাংলার মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূলকে যা খুশি করার ‘লাইসেন্স’ এই ভোটের ফল দেয়নি। বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা বা কুৎসার পথে না গিয়ে তৃণমূলের জনবিরোধী ও সুবিধাবাদী নীতি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সিপিআই।