বটুকেশ্বর দত্তের জন্মস্থানে বিপ্লবী-স্মরণ। নিজস্ব চিত্র।
ঘরে-বাইরে পালিত হল বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের জন্মজয়ন্তী। তাঁর জন্মস্থান পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওয়ারি গ্রামের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অংশেও তাঁর জন্মদিন পালন হয়। বিপ্লবীর জন্মস্থান বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওয়ারি গ্রামে অনুষ্ঠান করে বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটি। পাশাপাশি, বর্ধমানে বাইক মিছিলের আয়োজন করে সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের ছাত্র ও যুব শাখা।
বটুকেশ্বরের ১১২তম জন্মদিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ওয়ারি গ্রামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটি। দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান দক্ষিণের মহকুমা শাসক, খণ্ডঘোষের বিডিও, স্থানীয় বিধায়ক নবীন বাগ প্রমুখ।
বিপ্লবের আঁতুড়ঘর ওয়ারি গ্রামে আজও রয়েছে বটুকেশ্বর দত্তের টিনের চালের মাটির দোতলা বাড়িটি। বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটি জন্মভিটে সংরক্ষণ করেছে। সম্প্রতি তাঁর বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তৈরির পথে সংগ্রহশালা। নগেন্দ্র নাথ ঘোষের ঐতিহাসিক পাতালঘর-সহ পুরো বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি মধুসূদন চন্দ্র।
পটনায় এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে বটুকেশ্বর দত্তের একমাত্র মেয়ে তথা পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রাক্তন অধ্যাপিকা ভারতী দত্ত বাগচীর শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করা হয়। বিজেপি-আরএসএস-এর আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের রাজনীতির আবহে বটুকেশ্বরের নীতিকে নতুন করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বছরভর কর্মসূচিরও ঘোষণা করেছে সিপিআইএমএল লিবারেশন।
পটনায় বটুকেশ্বর দত্তের জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।
১৯২৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর। লাহৌরে অত্যাচারী পুলিশ আধিকারিক স্যান্ডারসনকে বোমা মারেন স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত দুই অসমসাহসী। ‘দুর্ধর্ষ জুটি’কে ধরতে ইংরেজ পুলিশ কোমর বেঁধে নামে। কিন্তু ভূ-ভারত ঢুঁড়ে ফেলেও খোঁজ মেলেনি দুই তরুণের। ব্রিটিশ পুলিশকে বোকা বানানো দুই যুবক ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম দুই কারিগর, বটুকেশ্বর দত্ত এবং ভগৎ সিংহ। বৃহস্পতিবার পালিত হল সেই বটুকেশ্বর দত্তের জন্মজয়ন্তী।
শোনা যায়, ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে লাহৌর থেকে অধুনা পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওয়ারি গ্রামে এসে গা ঢাকা দিয়েছিলেন বটুকেশ্বর ও ভগৎ। এটাই বটুকেশ্বরের জন্মভিটে। কিন্তু কোনও ভাবে পুলিশের কানে চলে যায় সেই খবর। বটুকেশ্বরের বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। সেই সময় বটুক, ভগতের সহায় হন প্রতিবেশী নগেন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁর বাড়ির পাতালঘরে ঠাঁই হয় স্যান্ডারসনকে বোমা মারা দুই বিপ্লবীর। এক টানা ১৮ দিন পাতালঘরে আত্মগোপন করেছিলেন দু’জন। তার পর মহিলার ছদ্মবেশ ধরে আবার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পলায়ন। কথিত আছে, পাতালঘরের ওই ১৮ দিনে চূড়ান্ত হয়েছিল সংসদে বোমা মারার পরিকল্পনা।