প্রশাসনিক ভবনের ছাদে বসে শেখ সুখচাঁদ।—নিজস্ব চিত্র।
এমবিএ ট্যুরিজিমে ভর্তির চূড়ান্ত তালিকায় গড়মিলের অভিযোগ ও ভর্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে উঠে কর্তৃপক্ষকে রীতিমতো সময় বেঁধে দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিলেন রাজ কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের প্রাক্তন সভাপতি শেখ সুখচাঁদ। শেষ পর্যন্ত ঘন্টা সাড়ে তিন ঘন্টা পরে ছাদ থেকে নামানো হয় শেখ সুখচাঁদকে। ততক্ষণে গলায় দড়ি বাঁধা অবস্থাতেই বসেছিলেন তিনি। ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ, ওই পড়ুয়াকে নামাতে কোনও উদ্যোগ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শেখ সুখচাঁদের অভিযোগ ভর্তির জন্য প্রকাশিত প্রথম তালিকায় তাঁর নাম ১৮ নম্বরে ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায় সুখচাঁদের নাম নেই। এরপর গত দেড় মাস ধরে নিজের ভর্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন সুখচাঁদ। সোমবারও একই দাবি নিয়ে প্রায় ১০০ অনুগামীকে সঙ্গে করে উপাচার্যের দফতরের সামনে ধর্ণায় বসেন তিনি। তবে উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার ওই দিন তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি বলেই জানা গিয়েছে। মঙ্গলবারও উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে বিফল হয়ে সুখচাঁদ এ বার ‘অন্য’ পথ ধরেন।
দুপুর দু’টো পঞ্চাশের সময় হঠাত্ই দেখা যায় রাজবাটি প্রশাসনিক ভবনের মিউজিয়ামের ছাদের উপর গলায় ফাঁস লাগিয়ে বসে আছেন সুখচাঁদ। সেখান থেকে পা দোলাতে দোলাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সন্ধ্যে ছ’টা পর্যন্ত সময় দিয়ে সুখচাঁদ জানান, ওই সময়ের মধ্যে ভর্তি না করানো হলে আত্মঘাতী হবেন তিনি।
মুহূর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। সুখচাঁদের অনুগামীদের একাংশ উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রশাসনিক ভবনে ঢোকার সমস্ত রাস্তা। চত্বরে ছুটে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী। উপাচার্যের দেখা না পেয়ে সুখচাঁদের অনুগামীদের কয়েকজন রাজবাটি চত্বরে ভাঙচুরও চালায় বলে অভিযোগ। এ দিকে ছেলের এ হেন কীর্তির কথা শুনে ছুটে আসেন সুখচাঁদের বাবা, পেশায় ভ্যান চালক শেখ নজরুল ও মা রাজিয়া বিবি। বর্ধমানের কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা শেখ নজরুল ও রাজিয়া বিবি কাঁদতে কাঁদতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাতে থাকেন, “ছেলেকে বাঁচান। ভর্তি করার কোনও দরকার নেই।” কিন্তু এরপরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সুখচাঁদকে নীচে নামাতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ অনুগামীদের একাংশের।
সন্ধ্যে ছ’টার কিছু আগে দমকল এসে হাজির হয়। কিন্তু তারাও সুখচাঁদকে নামাতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ততক্ষণে রাজ কলেজের পড়ুয়া পিন্টু খান ও কেষ্টপুরের বাসিন্দা শেখ কাজল পাইপ বেয়ে মিউজিয়ামের ছাদে উঠে পড়েছেন। তাঁরা শেখ সুখচাঁদকে জাপটে ধরেন। তারপরে আরও কয়েকজন উঠে সুখচাঁদকে সন্ধ্যে ছ’টা নাগাদ নীচে নামান। সুখচাঁদ জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় তাঁকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়।
যদিও এরপরেও সুখচাঁদকে ওই কোর্সে ভর্তির দাবিতে অনড় থাকেন সুখচাঁদের অনুগামীরা। রাজ কলেজের একদল পড়ুয়া টিএমসিপি নেতা শেখ আমানুল্লার নেতৃত্বে উপাচার্যের ঘরে ঢোকার পথে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। টিএমসিপি নেতা তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন দুই পদাধিকারী, সভাপতি নির্ভীক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক দীপক পাত্রও সুখচাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে বলতে থাকেন, “আমাদের একটাই দাবি, ওকে ভর্তি করে নিতে হবে। কর্তৃপক্ষের লিখিত প্রতিশ্রুতি না পেলে আমরা কেউ আজ রাতে ফিরব না। উপার্র্চাযকেও ফিরতে দেওয়া হবে না।” যদিও শেষ পর্যন্ত রাত সোয়া আটটা নাগাদ পুলিশি হস্তক্ষেপে অবস্থান উঠে যায়।
পুরো ঘটনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন জানিয়ে উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বলেন, “প্রায় ২০-৩০ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে। ভর্তি হয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। কিন্তু এভাবে কাউকে ছাদে উঠতে দেখা যায়নি।”
কিন্তু প্রাথমিক তালিকায় নাম থাকার পরেও চূড়ান্ত তালিকায় সুখচাঁদের নাম বাদ গেল কীভাবে? উপাচার্যের দাবি, “প্রাথমিক তালিকা প্রভিশনারি। চূড়ান্ত তালিকাই ভর্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবুও পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে।”