প্রতীকী চিত্র।
প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘক্ষণ পড়েছিলেন অসুস্থ মহিলা। পাশে শিশুকন্যা। হকারদের কাছে খবর পেয়ে রবিবার পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় স্টেশনে পৌঁছন ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’-এর সদস্যেরা। প্রশাসনকে খবর দেওয়ার পাশাপাশি, রেলপুলিশের সঙ্গে দু’জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান তাঁরা। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কম থাকায় মহিলাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে, সোমবার সকালে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। শিশুটিকে পাঠানো হয়েছে সরকারি হোমে। পুলিশ-প্রশাসনের প্রাথমিক অনুমান, করোনা আক্রান্ত সন্দেহে মা-মেয়েকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল স্টেশনে। পরিবারের খোঁজ চলছে।
প্রশাসন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মহিলার নাম বুধনি ওরফে মুন্নি ওরাং। পুলিশের দাবি, বছর ছয়েকের শিশুটি তাদের জানিয়েছে, তাদের বাড়ি দুর্গাপুরের গোপালপুরে। ‘কাকা’র সঙ্গে ‘টমটম’ (টোটোর স্থানীয় নাম) করে তারা এখানে পৌঁছেছিল। বিডিও (বর্ধমান ২) সুবর্ণা মজুমদার বলেন, ‘‘কে বা কারা শক্তিগড় স্টেশনে মা-মেয়েকে ফেলে রেখে চলে যায়। মহিলাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও মেয়েটিকে সরকারি হোমে পাঠানো হয়েছে। বিশদ তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।’’
রেড ভলান্টিয়ারেরা জানান, শক্তিগড় স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের পাশে ওভারব্রিজে সিঁড়ির পাশে মহিলা ও শিশুটি পড়েছিলেন। তাঁদের পাশে একটি ব্যাগ ও জলের বোতল ছিল। রেলের হকারেরা জানান, রবিবার সকাল ১১টা থেকে ও ভাবে তাঁদের সেখানে দেখা যায়। শিশুটির জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি, হকারেরা রেড ভলান্টিয়ারদের বিষয়টি জানান। ওই সংগঠনের সদস্য সৌমেন তা বলেন, ‘‘আমরাই বিডিও, রেলপুলিশকে ফোন করে ঘটনার কথা জানাই। সন্ধ্যায় দু’জনকে বড়শুলে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।’’
চিকিৎসকেরা জানান, বছর পঁচিশের মহিলার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ষাটে নেমে এসেছিল। লালারসের নমুনা নিয়ে করোনা পরীক্ষা করার মতো শারীরিক অবস্থা না থাকায় অক্সিজেন দিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসে। বিডিও বিষয়টি জানার পরে, চাইল্ডলাইনে খবর দেন। চাইল্ডলাইনের বর্ধমানের কো-অর্ডিনেটর অভিজিৎ চৌবে বলেন, ‘‘আমরা রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে বামচাঁদাইপুরে সমাজকল্যাণ দফতরের হোমে রেখেছি। শিশুটি সুস্থ রয়েছে।’’
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ মহিলার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত জানান, মহিলার ‘নিউমোনিয়া’ হয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষার রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ এসেছে। আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে।
শক্তিগড় থানার পুলিশ জানায়, রাজ্য জুড়ে বিধিনিষেধ চালু রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মা-মেয়ে শক্তিগড় স্টেশনে কী ভাবে পৌঁছলেন, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। শিশুটিকে চাইল্ড লাইনের গাড়িতে তোলার সময়েও সে ‘কাকা’র খোঁজ করছিল। গাড়িতে বসেই সে জিজ্ঞাসা করে, ‘‘কাকা নিতে এসেছে?’’ পুলিশ জানায়, ‘কাকা’র খোঁজে তল্লাশি চলছে।
একটি আদিবাসী সংগঠনের বর্ধমানের সম্পাদক জগন্নাথ টুডু বলেন, ‘‘এখন হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পঞ্চায়েত, সব জায়গাতেই সহায়তার সুবিধা রয়েছে। তা সত্ত্বেও এ ভাবে প্ল্যাটফর্মে ফেলে রেখে যাওয়া, খুবই দুঃখজনক ঘটনা।’’