রানিগঞ্জের পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে সিপিএম কিসের উপরে ভিত্তি করে লড়বে।
কোথাও সিপিএমের বা গণ-সংগঠনের কার্যালয় তৃণমূলের ‘দখলে’। কোথাও কোথাও আবার দলীয় কর্মসূচিও খুব একটা দেখা যায় না বলে পর্যবেক্ষণ এলাকাবাসীর একাংশের। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে রানিগঞ্জের পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে সিপিএম কিসের উপরে ভিত্তি করে লড়বে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল। যদিও, সিপিএম জানাচ্ছে, গণ-সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বেড়েছে। কার্যত এই ভরসাতেই সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা হবে। সিপিএমের বক্তব্য ও অভিযোগে আমল দেয়নি তৃণমূল।
রানিগঞ্জ ব্লকে ছ’টি পঞ্চায়েত, একটি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে। ঘটনা হল, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে, পঞ্চায়েত স্তরে ৭৪টি, পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ১৬টি এবং জেলা পরিষদের দু’টি আসন ছিল। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পঞ্চায়েত স্তরে ১৯টি আসন বাড়লেও অন্য দু’টি স্তরের আসন সংখ্যা একই রয়েছে। সে বার ভোটে সিপিএম পঞ্চায়েত স্তরে মোট ছ’টি আসন ও পঞ্চায়েত সমিতিতে একটি আসন পেয়েছিল। বাকি সর্বত্র জিতেছিল তৃণমূল। এর মধ্যে তৃণমূল পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির যথাক্রমে ২৯টি ও চারটি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল।
এ দিকে, সিপিএম সূত্রে অভিযোগ, রাজ্যের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে, রতিবাটি পঞ্চায়েতের কোয়ারডি কোলিয়ারি, তিরাট পঞ্চায়েতের নিমচা কোলিয়ারিতে সিটু অনুমোদিত কোলিয়ারি মজদুরসভার শাখা কার্যালয় দখল, বল্লভপুর পঞ্চায়েতে বেলুনিয়ায় দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় তৃণমূল। যদিও, তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। শ্রমিক সংগঠনের দু’টি কার্যালয় এখনও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনেরই দখলে।
পাশাপাশি, স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, সিপিএম ‘বিকল্প গ্রামসভা’ কর্মসূচি বল্লভপুর ও আমরাসোঁতা বাদে চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় করতেই পারেনি সিপিএম। করুণ অবস্থা রতিবাটি পঞ্চায়েত এলাকায়। মাসখানেক আগে পাঁচটি পঞ্চায়েত কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হলেও রতিবাটিতে তা হয়নি। রতিবাটির ১৩টি, এগারার তিনটি, কাঁকরডাঙার একটি এবং তিরাটের পাঁচটি সংসদ এলাকায় সিপিএমের শাখা কমিটি বৈঠক বা মিছিল করেনি দীর্ঘদিন। কিছু এলাকায় মিছিল হলেও, বাইরে থেকে লোক আনতে হয় সিপিএমকে।
শুধু তাই নয়, যে ক’টি আসন ২০১৮-য় সিপিএম জিতেছিল, সেখানেও দলবদলের প্রভাব পড়ে। সে বারের পঞ্চায়েত ভোটে শুধুমাত্র আমরসোঁতা পঞ্চায়েতের চারটি সংসদে জিতে পঞ্চায়েতটিতে ক্ষমতা ধরে রাখে সিপিএম। কিন্তু বছর দুয়েক আগে তিন জন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। এ ছাড়া, বল্লভপুর পঞ্চায়েতে দু’জন এবং রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতিতে একটি সংসদ সিপিএমেরদখলে রয়েছে।
এমন সাংগঠনিক ও ভোট-রাজনীতির পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে সিপিএম এ বার কি ভোটের আগেই বেকায়দায়, প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল। যদিও আমরাসোঁতা পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গঠিত রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির ১৩ নম্বর আসনে থাকা সিপিএমের একমাত্র প্রতিনিধি মঙ্গল হেমব্রম বলেন, “মানুষ আমাদের এই আদর্শের কথাটা শুনছেন। পাশাপাশি, সন্ত্রাস প্রতিরোধেরও ডাক দেওয়া হচ্ছে।” সিপিএমের রানিগঞ্জ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুপ্রিয় রায়ও জানাচ্ছেন, গত বার ভোটে অনেকেই সন্ত্রাসের কারণে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। এ বার তা যাতে না হয়, সে জন্য বেশি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস মোকাবিলা করে দলীয় প্রার্থীদের মনোননয়পত্র দাখিল করানোর উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু সূত্রের খবর, রানিগঞ্জ এরিয়া কমিটিতে গত পাঁচ বছরে সিপিএমের সদস্য সংখ্যা একই আছে, ৩০৯ জন। তা হলে ‘বেশি মানুষ’ আসবেন কোথা থেকে? সুপ্রিয়ের দাবি, “গণ-সংগঠনগুলির সদস্য সংখ্যা বেড়েছে।” কৃষকসভার রানিগঞ্জ থানা কমিটির সম্পাদক পরাশর মাহান্ত ও খেতমজুর ইউনিয়নের রানিগঞ্জ থানা কমিটির সম্পাদক পূর্ণদাস বন্দ্যোপাধ্যায়েরা জানান, গত পাঁচ বছরে পৃথক ভাবে তাঁদের সংগঠনের সদস্য বেড়েছে দু’হাজারেরও বেশি। ডিওয়াইএফের রানিগঞ্জ এরিয়া সম্পাদক রজনী পাসোয়ান জানাচ্ছেন, পাঁচ বছরে তাঁদের প্রায় তিন হাজারের বেশি সদস্য বেড়েছে। বাড়ি-বাড়ি প্রচার, ছোট সভা, তৃণমূল ও বিজেপির দুর্নীতি, এই তিন বিষয়কে অবলম্বন করেই ভোটে নামতে চাইছে সিপিএম, জানাচ্ছেন নেতৃত্ব।
যদিও, এ সবে আমল দিচ্ছেন না তৃণমূল। দলের আসানসোল দক্ষিণ গ্রামীণ ব্লকের সভাপতি দেবনারায়ণ দাস। তাঁর কথায়, “সন্ত্রাসের অভিযোগ ভিত্তিহীন। সিপিএম সাইনবোর্ডে পরিণত হয়ে গিয়েছে।” এ দিকে, বিজেপির জেলার সভাপতি দিলীপ দে’র বক্তব্য, “সিপিএমকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন।”