শ্রমিকদের উদ্ধার করছে পুলিশ, কাটোয়ায় রেললাইনে। নিজস্ব চিত্র
কাটোয়া থেকে রেললাইন বরাবর হেঁটে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা নিয়ে বেরিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের কয়েকজন বাসিন্দা। মাঝপথে তা পুলিশের চোখে পড়ে যায়। তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কাটোয়ার এক ত্রাণ শিবিরে। সোমবারের এই ঘটনার মতো রেললাইন বা জাতীয় সড়ক ধরে কেউ হেঁটে ফিরছেন কি না, তা নজরদারি শুরু করেছে রেল এবং জেলা পুলিশ। কাউকে হেঁটে যেতে বা শুয়ে থাকতে দেখলে তাঁদের কাছাকাছি অস্থায়ী শিবিরে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে পুলিশকে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে থাকা ‘ওয়াচ টাওয়ার’-এর সিভিক ভলান্টিয়ারদের রাস্তায় বিশেষ নজর রাখতে বলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ।
শুক্রবার ভোরে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে মালগাড়ির চাকার তলায় পড়ে মৃত্যু হয় ঘুমন্ত ১৬ জন শ্রমিকের। সে দিন বিকেলেই আবার বীরভূমের নলাহাটির ব্রাহ্মণী নদীর রেলসেতুর কাছে দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পায় ২০ জনের একটি শ্রমিকের দল। তাঁরা বর্ধমান থেকে রেললাইন ধরে ঝাড়খণ্ডে বাড়ি ফিরছিলেন। রেললাইনে তাঁদের হাঁটতে দেখে ট্রেন থামিয়ে দেন চালক। পরে আরপিএফ তাঁদের উদ্ধার করে।
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দুই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছেন কর্তারা। এক রেল-কর্তার কথায়, “লাইন দিয়ে যাতায়াত করা বেআইনি। এখন কোনও যাত্রিবাহী ট্রেনও চলছে না। ফলে, স্টেশন বা লাইনে আসার তো কোনও প্রয়োজন নেই।’’ তিনি জানান, এই পরিস্থিতিতে লাইনে নজর রাখা হচ্ছে। চালক এবং গার্ডদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকা, বেশি করে হর্ন বাজানোর নির্দেশ দেওয়া করেছে।
রেল পুলিশ সুপার (হাওড়া ডিভিশন) কে কারনান বলেন, ‘‘আরপিএফের সঙ্গে সমন্বয় করে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। রেললাইন দিয়ে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের আটকে আমরা জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দিচ্ছি।’’ জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতীও বলেন, ‘‘রেললাইন বা জাতীয় সড়ক ধরে কেউ হেঁটে এলে বা বসে থাকলে তাঁদের উদ্ধার করে কাছাকাছি কোনও অস্থায়ী শিবির বা নিভৃতবাস কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্যপরীক্ষার পরে, তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। গত দু’দিনে একশোরও বেশি মানুষকে রেললাইন বা রাস্তা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।’’
পূর্ব বর্ধমানের মধ্যে রেলের অনেকগুলি শাখা রয়েছে। বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সংযোগও রয়েছে। জেলায় আনুমানিক ৩০০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। বিভিন্ন জেলা বা ভিন্ রাজ্য থেকে ওই রেলপথ ধরেই পরিযায়ী শ্রমিকেরা আসছেন বা যাচ্ছেন। সোমবার যেমন মুর্শিদাবাদের দলটি কাটোয়া থানার আইসি বিকাশ দত্তের নজরে পড়ে যায়। রবিবার মেমারি ও জামালপুরে রেললাইন ধরে বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক ঝাড়খণ্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। পুলিশ তাঁদের আটকে অস্থায়ী শিবির, নিভৃতবাস কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে তুলেছে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেক কর্মীকে বিশেষ সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। রেললাইন ধরে কেউ গেলেই কাছাকাছি স্টেশনে বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খবর দিতে বলা হয়েছে। রেলের ‘সেফ্টি কার’ ঘনঘন চালানোর কথাও বলা হয়েছে। আরপিএফ এবং রেল পুলিশকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। আরপিএফের এক আধিকারিক বলেন, “ছোট-ছোট দল গড়ে এলাকা ভাগ করে রেলের লাইনম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নজর রাখা হচ্ছে।’’ জেলা পুলিশ জানায়, লেভেল ক্রসিং লাগোয়া এলাকা-সহ নানা জায়গায় নজরদারি করা হচ্ছে।