প্রতীকী ছবি।
‘লকডাউন’-পর্বে বিভিন্ন স্কুলে সরকারি নির্দেশিকা মেনে পড়ুয়াদের জন্য অনলাইনে পঠনপাঠন কম-বেশি হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিম বর্ধমানের সর্বত্র অনলাইনে পড়াশোনার পরিকাঠামো কতটা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক এবং অভিভাবকদের একাংশ। তাঁরা জানান, অনেক জায়গায় ‘ইন্টারনেট’ সংযোগের সমস্যা রয়েছে। বহু পড়ুয়ার ‘স্মার্টফোন’ থাকলেও ক্লাস করার মতো ই-সংযোগ নেই। অনেকের আবার স্মার্টফোনই নেই। মূলত প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়ারা এই পরিস্থিতিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বলে দাবি।
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ এপ্রিল জেলা স্কুল পরিদর্শকের (প্রাথমিক) দফতর থেকে সমস্ত প্রাথমিক স্কুলে অনলাইন পড়াশোনা কী ভাবে চলবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা পাঠানো হয়। ‘মডেল’ প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি, পড়ুয়াদের পড়াশোনা কেমন চলছে, সেই ‘রিপোর্ট’ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাঠাতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এবং যে স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি রয়েছে, সব ক্ষেত্রেই হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে ক্লাস করাতে হবে।
লাউদোহা, কাঁকসা, অণ্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর-সহ জেলার নানা প্রান্তের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, অনলাইনে পড়াশোনার ক্ষেত্রে মূলত তিন ধরনের অসুবিধা হচ্ছে। তাঁরা জানান—
প্রথমত, যোগাযোগের জন্য পড়ুয়াদের প্রায় সবারই কোনও না কোনও ফোন নম্বর রয়েছে। ফলে, তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু, ওই সব এলাকাগুলির এক-একটি স্কুলে গড়ে দু’শো পড়ুয়ার মধ্যে প্রায় দেড়শো জনেরই বাড়িতে স্মার্টফোন না থাকায় সমস্যা হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক, শিক্ষিকাদের দাবি।
দ্বিতীয়ত, অনেকের কাছে স্মার্টফোন থাকলেও ই-সংযোগ যথাযথ না থাকা, পরিমাণ মতো ‘ডেটা’ না থাকার কারণে সমস্যা হচ্ছে।
তৃতীয়ত, স্কুলের শিক্ষকেরা ‘বাংলা শিক্ষা পোর্টাল’ থেকে অধ্যায় ভিত্তিক ‘হোমওয়ার্ক’ এক ‘কপি’ করে ‘ডাউনলোড’ করে তা পড়ুয়াদের দিচ্ছেন। তা ‘ফটোকপি’ করানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনেক অভিভাবকই জানাচ্ছেন ফটোকপি করার মতো আর্থিক ক্ষমতা তাঁদের নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, বেশির ভাগ অভিভাবক দিনমজুরি, পরিচারিকা, ঠিকাকর্মী হিসাবে কাজ করেন। ‘লকডাউন’-এর জেরে তাঁদের রুজি নিয়ে যেখানে প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে ছেলেমেয়েদের জন্য ই-পড়াশোনার ব্যবস্থা করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সমস্যার কথা জানিয়েছেন কাঁকসার অভিভাবক শেখ ফারুক, রিতা দাস, সীতা হেমব্রম প্রমুখ। তাঁরা বলেন, ‘‘ক্লাসে যোগ না দিতে পারলে ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে পড়বে। পড়ছেও। কিন্তু স্মার্টফোন কেনা বা পর্যাপ্ত ই-সংযোগের জন্য খরচ জোগাড় করাটা সম্ভব নয়।’’ এই পরিস্থিতিতে বিজড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনির্বাণ বাগচী বলেন, ‘‘কত জন পড়ুয়া অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনা করছে তা নিয়ে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক পড়ুয়ারই অনলাইনে পড়াশোনা করার সুযোগ নেই।’’
বিষয়টি নিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) দেবব্রত পাল বলেন, ‘‘ইন্টারনেটের সমস্যা থাকলে সেই পড়ুয়াদের ফোন করে পড়ানোর পরমার্শ দেওয়া হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। বাংলা শিক্ষা পোর্টাল থেকে মডেল প্রশ্নপত্র ডাউনলোডের পরে ফটোকপি করে তা পড়ুয়াদের দেবেন তাঁরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ভাবেই কাজ চালাতে হবে।’’