প্রতীকী ছবি
রেললাইনে বসে মোবাইলে গেম খেলছিলেন যুবক। এতটাই মগ্ন ছিলেন যে বন্ধুদের ডাকেও হুঁশ ফেরেনি। ওই অবস্থাতেই ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় তাঁর। বৃহস্পতিবার রাতেই আবার কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইন ধরে হাঁটার সময়ে মৃত্যু হয়েছে আর এক যুবকেরও।
কালনা ২ ব্লকের জিউধরা ও পূর্ব সাতগাছিয়া এলাকার দু’টি ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে সচেতনতা নিয়ে। বারবার সতর্ক করার পরেও রাতে বা সকালে রেললাইন ধরে হাঁটা বা রেললাইনে বসে আড্ডা দেওয়ার মতো ঘটনা বিপদ বাড়াচ্ছে বলেই মনে করছেন রেলের আধিকারিকেরা। আগেও কালনা মহকুমার নান্দাই, ধাত্রীগ্রাম-সহ কয়েকটি এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার কালনার মহকুমাশাসক সুমনসৌরভ মোহান্তি বলেন, ‘‘রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে রেললাইনের আশপাশে মোবাইল ব্যবহার নিয়ে সচেতনেতামূলক বোর্ড বসানোর চেষ্টা করা হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পেশায় রাজমিস্ত্রি টোটন সাঁতরা (২৬) প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার পরে, বাড়ির কাছে রেললাইনের আশেপাশে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেও তিন বন্ধুর সঙ্গে রেললাইনের উপরে বসেছিলেন তিনি। গল্পগুজবের ফাঁকেই মোবাইলে গেম খেলছিলেন টোটন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সাড়ে ৭টা নাগাদ কাছাকাছি সিগন্যাল পোস্ট থেকে ট্রেন আসার সঙ্কেত দেওয়া হয়। সঙ্কেত দেখে বন্ধুরা লাইন থেকে উঠে যান। টোটনকেও সরে যাওয়ার কথা বলেন তাঁরা। কিন্তু ‘যাচ্ছি’ বলেও ওই যুবক খেলায় এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েন যে ট্রেনের আওয়াজ খেয়ালই করেননি। মুহূর্তে কাটোয়াগামী কামরূপ এক্সপ্রেসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তাঁর। হাত থেকে দূরে ছিটকে পরে মোবাইলটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। টোটনবাবুর কাছে দু’জনও ঘটনাটি দেখে জ্ঞান হারান। বসে আশপাশের বাসিন্দারা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন।
মৃতের এক আত্মীয় ইতি সাঁতরা বলেন, ‘‘মোবাইলের নেশায় নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এতটাই মজে যাচ্ছে যে স্বাভাবিক বুদ্ধিও হারিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে, এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, গরম পড়তে শুরু করেছে। এই সময়ে সন্ধ্যার দিকে অনেকেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে রেললাইনের আশেপাশে ঘোরাফেরা করেন। অনেকেরই হাতে মোবাইল থাকে। কেউ কথা বলতে বলতেও রেললাইনে উঠে পড়েন। এ ধরনের ঘটনার ফলেই দুর্ঘটনা বাড়ছে।
একই ভাবে মৃত্যু হয়েছে পূর্ব সাতগাছিয়া এলাকার বাসিন্দা, পেশায় কাঠমিস্ত্রি নরোত্তম হালদারেরও (২২)। পরিজনেদের দাবি, ওই দিনই রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ হেডফোনে কথা বলতে বলতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাছাকাছি রেললাইনের দিকে যান তিনি। কিছুক্ষণ পরেই রেললাইনে তাঁর দেহ মেলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, ট্রেনের আওয়াজ শুনতে না পাওয়াতেই এই ঘটনা।