তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে শুক্রবার জয়লাভ করেছেন শাসক দলের প্রার্থী। বিরোধী বিজেপি শিবিরের থেকে সেই বিধানসভা কেন্দ্র কার্যত ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। লড়াইয়ে ছিলেন কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়ও। আর সেই ধূপগুড়ি জয়ের দিনে পশ্চিম বর্ধমানে রাজনীতির ভিন্ন ছবি দেখল রাজ্যবাসী। পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডালে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকা সিপিএমের দলীয় কার্যালয় খুলে দিতে এগিয়ে এলেন খোদ তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
শুধু সিপিএমের দলীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া নয়। দলীয় কার্যালয় খুলে দেওয়ার পর সেখানে নরেন্দ্রনাথ এবং সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীকে একসঙ্গে বসে খোশমেজাজে গল্প করতেও দেখা গেল শুক্রবার।
এই প্রসঙ্গে সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘নির্বাচনের সময় দুই দলের মধ্যে ছোটখাটো মনমালিন্য হয়েছিল। এর পরেই নরেনের (নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী) সঙ্গে আমার কথা হয়। নরেন কলেজ জীবনে আমার ছোট ভাইয়ের মতো ছিল। ঐ জন্য আমরা এখানে এসে চা খেলাম, গল্প করলাম।’’
অন্য দিকে, নরেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘বংশদা কলেজে আমার সিনিয়র ছিলেন। আমায় তিনি ফোন করেন তাই এসে তাঁদের দলীয় কার্যালয় খুলিয়ে দেওয়া হলো। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় সিপিএম আমাদের অফিস ভেঙে দিয়েছিল। অশান্তি ঝামেলার জেরে সিপিএমের এই দলীয় কার্যালয়ও বন্ধ হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছেন তার জন্যই আমরা এই দলীয় কার্যালয় খুলে দিলাম।’’
তৃণমূল এবং সিপিএম—দুই দলই বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দল। তবে সর্বভারতীয় স্তরে জোট গঠনের প্রথম থেকেই এই দুই দলকেই আক্রমণ করে আসছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির দাবি, জাতীয় স্তরে জোট বাঁধলেও রাজ্যে দু’দলের সম্পর্ক ভাল নয়। দু’দলের ‘বন্ধুত্ব’ দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলেও বার বার দাবি করে এসেছে বিজেপি। তবে অন্ডালে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের বিজেপি জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেসের নিচু তলার কর্মীরা ঝান্ডা হাতে নিয়ে সমস্ত জায়গায় আন্দোলন করছে। অন্য দিকে, এই দলের নেতারা ফুল দেওয়া-নেওয়া করছে। একসঙ্গে বসে চা পান করছে। আবার দিল্লিতে বিরিয়ানি খাচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়। সব সময় এরা নিজেদের স্বার্থ এবং নিজেদের চেয়ার ছাড়া আর কিছুই বোঝেনা।’’
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে সরাতে সর্বভারতীয় স্তরে জোট বেঁধেছে সিপিএম এবং তৃণমূল। আর রাজ্যস্তরেও তার প্রভাব পড়েছে দু’দলের নেতাকর্মীদের একাংশের উপর। বেশ কয়েকটি জায়গায় কাছাকাছি এসেছে দুই দল। সেই কারণেই অণ্ডালে রাজনীতির এই ছবি দেখা গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।