চন্দ্রবাবু নাইডু। —ফাইল চিত্র।
জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নায়ডু। শনিবার সকালে স্কিল ডেভেলপমেন্ট দুর্নীতি মামলায় তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র প্রধানকে গ্রেফতার করা হয়। নান্দিয়াল জেলার পুলিশ এবং সিআইডি তাঁকে গ্রেফতার করেছে বলে দলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। পূর্ব গোদাবরী জেলায় তাঁর ছেলে নারা লোকেশকেও আটক করেছে অন্ধ্র পুলিশ। ২০২১ সালে এই দুর্নীতির মামলায় চন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
টিডিপি সূত্রে খবর, দলীয় কর্মসূচি উপলক্ষে অন্ধ্রপ্রদেশের নান্দিয়ালে ছিলেন চন্দ্রবাবু। একটি জনসভায় ভাষণ দেওয়ার পরে ভ্যানিটি ভ্যানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। শনিবার ভোররাতে সেখানেই হানা দেয় সিআইডি এবং অন্ধ্র পুলিশ। সঙ্গে ছিলেন নান্দিয়ালের ডিআইজি রঘুরামি রেড্ডি। সকাল ৬টা নাগাদ চন্দ্রবাবুকেকে গ্রেফতার করে ভ্যানিটি ভ্যান থেকে বার করে আনা হয়।
টিডিপির মুখপাত্র জানিয়েছেন, গ্রেফতারির সময় নায়ডু পুলিশকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছিলেন। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদেরও সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ। তাঁকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন টিডিপির প্রচুর কর্মী-সমর্থক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।
গ্রেফতারির পর চন্দ্রবাবুকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নান্দিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে বিজয়ওয়াড়া জেলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। শনিবারই তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে।
শুক্রবার, চন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে জনসাধারণের টাকা লুট করার অভিযোগ এনে তাঁকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মেরুগা নাগার্জুন। তিনি যে শীঘ্রই গ্রেফতার হতে চলেছেন, তেমনটা সম্প্রতি দাবি করেছিলেন চন্দ্রবাবুও।
প্রসঙ্গত, গত মাসেই চন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ধারায় এফআইআর করেছিল সে রাজ্যের পুলিশ। চন্দ্রবাবুর অন্ধ্র সফরের সময় আন্নামায়া এবং চিত্তুর জেলায় দু’টি হিংসার ঘটনার জেরে এই পদক্ষেপ করে পুলিশ। ওই জোড়া হিংসার ঘটনায় পুলিশ এবং শাসকদল ওয়াইএসআর কংগ্রেসের কর্মীদের সঙ্গে টিডিপির কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে ২০ জনেরও বেশি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তারই জেরে এই পদক্ষেপ বলে অন্ধ্র পুলিশ দাবি করেছিল। চন্দ্রবাবু ছাড়া অভিযুক্তদের তালিকায় নাম ছিল অন্ধ্রের দুই প্রাক্তন মন্ত্রী দেবীনানি উমা, অমরনাথ রেড্ডি এবং প্রাক্তন বিধায়ক শাহজাহান শাহ। সকলের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানো, হত্যার চেষ্টা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রধান তথা অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসনের অভিযোগ তুলে গত বছর থেকে ধারাবাহিক ভাবে জেলাওয়াড়ি যাত্রা শুরু করেছেন চন্দ্রবাবু। কিন্তু তাঁর কর্মসূচি ঘিরে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা এবং অশান্তির ঘটনা ঘটে। গুন্টুর এবং নেল্লোর জেলায় চন্দ্রবাবুর সমাবেশে পদপিষ্ট হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে সময়ও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিল জগন্মোহনের পুলিশ। এ বার সরাসরি পুরনো দুর্নীতি মামলার জেরে চন্দ্রবাবুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। আগামী বছর লোকসভা ভোটের সঙ্গেই অন্ধ্রপ্রদেশে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। তার মধ্যে চন্দ্রবাবুর গ্রেফতারিতে ক্রমশ রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়ছে দক্ষিণ ভারতের ওই রাজ্যে।