কেন মলয়কে ডাকা হল, সে নিয়ে দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের একাংশ প্রশ্ন । — ফাইল চিত্র।
কয়লা-কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটককে ফের ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রে। কেন মলয়কে ডাকা হল, সে নিয়ে দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের একাংশ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বলে তৃণমূল সূত্রের দাবি। এর পিছনে বিজেপির ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ও দেখছেন মলয় ঘনিষ্ঠেরা। আন্দোলন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বেরও। বিজেপির পাল্টা দাবি, শাসক দল যতই তাদের দোষ দিক না কেন, ইডি ও সিবিআই-এর পদক্ষেপ হাতিয়ার করেই রাজনৈতিক আক্রমণ হবে।
ইডি-র একটি সূত্রের দাবি, কয়লা-কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মলয়কে এখনও পর্যন্ত আট বার তলব করা হলেও, তিনি এক বার এসেছেন। ঘটনা হল, কয়লা পাচার মামলায় এখনও পর্যন্ত ৪১ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। তাতে মলয়ের নাম নেই। তবে, গত ৭ সেপ্টেম্বর আসানসোল ও কলকাতায় এক যোগে মলয় ও তাঁর পরিজনদের পাঁচটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। আসানসোলের চেলিডাঙায় মলয়ের পৈতৃক বাড়ি, যেখানে তাঁর ভাই তথা আসানসোল পুরসভার ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক বাস করেন, সেখানেও গিয়েছিল সিবিআই। দিনভর তল্লাশির পরে সিবিআই অফিসারেরা বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন বলে দাবি। এর কিছুদিন পরে ইডি-র তলব পেয়ে মলয় দিল্লির অফিসে গিয়ে তদন্তকারীদের মুখোমুখী হন। এ বার ৩০ মার্চ তাঁকে ফের দিল্লিতে তলব করেছে ইডি। তবে, তার আগে আজ, বৃহস্পতিবার তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আপ্ত সহায়ক শঙ্কর চক্রবর্তীকে ইডি দিল্লিতে তলব করেছে বলে সূত্রের খবর।
শঙ্করের স্ত্রী দীপা আসানসোলের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি। বুধবার শঙ্করের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে জানা যায়, সম্প্রতি তাঁর চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তিনি বিশ্রামে আছেন। দীপার দাবি, “ইডি-র কোনও চিঠি পাইনি। পেলেই জানাব। এ সব নিয়ে চিন্তিত নই।”
মলয় ঘটককে ফের ইডি তলব করায় জেলা নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, এই ঘটনায় নিচুতলার কর্মীদের মনোবলে প্রভাব পড়ছে। কেন বার বার তলব, এমন প্রশ্ন তুলছেন কেউ-কেউ। যদিও আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ (ক্রীড়া ও সংস্কৃতি) গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “আসানসোলে বিজেপির এক নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরেই, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা জোরদার আন্দোলনের বিষয়ে আগামী শনিবার মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব।” দলের জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “তাৎক্ষণিক ভাবে কর্মীদের মধ্যে প্রভাব পড়তে পারে। তা যাতে না হয়, তাই নিয়মিত কেন্দ্র-বিরোধী কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
কম্বল-কাণ্ডে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা মুখপাত্র বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “ওঁরা প্রতিহিংসার অর্থ বিকৃত করেছেন। লালার (কয়লা মামলায় অভিযুক্ত অনুপ মাজি) ডায়েরিতে মলয়ের নাম আছে। এখন চাইলেও তা ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। জেলে যেতেই হবে।” তাঁর আরও দাবি, নিছক একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি নেতাকে হেনস্থার জবাব সাধারণ মানুষ দেবেন।