মিষ্টি হাতে তুলে দিচ্ছেন কাউন্সিলর (লাল জামা)। নিজস্ব চিত্র।
পুলিশের উর্দিতে থাকা এক জনকে ‘হুমকি’ দিচ্ছেন আসানসোল পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যাম সরেন। এমনই একটি ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) দিনকয়েক আগে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। যদিও, সে সময় অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন শ্যাম। সোমবার কার্যত পুলিশের কাছে ‘ভুল’ স্বীকার করেনিলেন তিনি। এ দিন সকালে কাল্লা মোড় এলাকায় প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুলিশকর্মীদের জড়িয়ে ধরে মিষ্টিও খাওয়ালেন তিনি। শ্যাম বলেন, “ওই দিন সাময়িক ভাবে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তেমন আচরণ করা ঠিক হয়নি। আমাদের মধ্যে আর কোনও বিবাদ নেই। আমরা সকলেই পুলিশের পাশে আছি।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,গত শুক্রবার সকাল ৮টা নাগাদ আসানসোল উত্তর থানার কাল্লা মোড়ের কাছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে এক মোটরবাইক আরোহী হেলমেট না পরে, কানে মোবাইল নিয়ে যাচ্ছিলেন। কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী তাঁকে ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে জরিমানা করেন।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সদলবলে ঘটনাস্থলে আসেন শ্যাম। ওই সূত্রের দাবি, তিনি কাল্লা মোড় লাগোয়া পুলিশের কিয়স্কে গিয়ে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে কেন, সে প্রশ্ন তুলে চিৎকার করেন। তখনই আঙুল উঁচিয়ে ‘মেরে গুটিয়ে দেব’ এই মর্মে তাঁকে কিছু বলতে শোনা যায়।— এই বিষয়টিরই ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) ভাইরাল হয়।
এর পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র সমালোচনা হয় শিল্পাঞ্চল জুড়ে। কটাক্ষ শুরু করেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বেরাও। যদিও ওই দিন বিষয়টি নিয়ে শ্যাম দাবি করেছিলেন, “কাউকে হুমকি দিইনি। ক্ষোভপ্রকাশ করেছি। কারণ কাল্লা মোড়ে নজরদারির নামে পুলিশ নিয়মিত তোলাবাজি করছে। এ দিনও তা-ই হওয়ায় প্রতিবাদ করেছি।” তবে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পরেই পুলিশ আধিকারিকেরা তৃণমূল নেতৃত্বকে এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগও করেন। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন।
তার পরেই সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দেখা গেল, কাল্লা মোড় লাগোয়া পুলিশ কিয়স্কে সদলবলে উপস্থিত হন শ্যাম। সে দিন পুলিশের উর্দিতে থাকা যাঁদের সঙ্গে তাঁর ‘কথা কাটাকাটি’ হয়েছিল, তাঁদের প্রত্যেককে মিষ্টি খাইয়ে করমর্দনও করেন তিনি। মুখে কোনও মন্তব্য করতে চাইলেও কাউন্সিলরের এ দিনের আচরণে খুশি পুলিশকর্মীরা।
এ দিনের বিষয়টি নিয়েও কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরাও। বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক তথা মুখপাত্র বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের টিপ্পনী, “এ যেন জুতো মেরে গরু দান। প্রকাশ্যে গালিগালাজ করার পরে মিষ্টি খাইয়ে মানুষের সম্মান ফেরে কি! আসলে বিপাকে পড়েছেন।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ খুবই মজার বিষয়। তৃণমূলের সকলেই ভাবছেন ক্ষমা চাইলেই সাত খুন মাফ হয়। সে সব দিন গিয়েছে।” তবে বিরোধীদের কটাক্ষকে গুরুত্ব দিতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “ভুল করলে তা স্বীকার করতে অপরাধ নেই। তৃণমূল দলের এটাই বিশেষত্ব।”