Burdwan Medical College

বিক্রির জন্যই শিশু চুরি, দাবি পুলিশের

পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিক্রি করার মতলবেই পরিকল্পিত ভাবে শিশুটিকে চুরি করা হয়েছিল। কাকে বিক্রি করা হত, এর সঙ্গে কারা-কারা যুক্ত রয়েছে ধৃত মহিলাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করলেই জানা যাবে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

সিসিটিভি ফুটেজের অংশ। এর সাহায্যেই অভিযুক্তকে ধরা হয়েছিল। ফাইল চিত্র

মায়ের পায়ের অস্ত্রোপচার-সহ নানা কারণে তিন লক্ষ টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। কন্যাসন্তান ‘বিক্রি’ করতে পারলে দেড় লক্ষ টাকার পাওয়ার আশ্বাস মিলেছিল। চুরি করা সদ্যোজাতকে ‘ক্রেতা’র হাতে তুলে দেওয়ার জন্য রায়না ব্লক হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ‘রফা’ না হওয়ায় রওনা দেন দুর্গাপুরে। অনাময় হাসপাতাল থেকে শিশু চুরিতে অভিযুক্ত মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেরা করে তারা এমন তথ্যই পেয়েছে, দাবি পুলিশের। ওই সদ্যোজাতকে লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মধুমিতাদেবীর দ্বিতীয় স্বামী, কেতুগ্রামের বহড়ানের বাসিন্দা মণি বৈরাগ্যকেও।

Advertisement

পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিক্রি করার মতলবেই পরিকল্পিত ভাবে শিশুটিকে চুরি করা হয়েছিল। কাকে বিক্রি করা হত, এর সঙ্গে কারা-কারা যুক্ত রয়েছে ধৃত মহিলাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করলেই জানা যাবে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পারিবারিক বিবাদের জেরে ছ’মাস আগেই মণিকে নিয়ে বহড়ান ছাড়েন মধুমিতা। পেশায় গাড়িচালক মণি গ্রামে ‘মদ্যপ’ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবেশীদের দাবি, চিকিৎসার কাজে বর্ধমানে যাওয়ার নাম করেই গ্রাম ছেড়েছিল ওই দম্পতি। কিন্তু সেখানে গিয়ে এমন কাণ্ড ঘটাবে, ভাবতে পারেননি তাঁরা। এ দিন ওই দম্পতিকে বর্ধমান আদালতে তোলা হলে মণিকে ছ’দিনের পুলিশ হেফাজত ও মধুমিতাকে জেল-হাজত দেওয়া হয়। টি-আই প্যারেডের পরে, মধুমিতাকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে, দাবি তদন্তকারীদের।

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, দুর্গাপুরের বেনাচিতির সত্যজিৎ পল্লির যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেখানে নিজেকে অন্তঃসত্ত্বা বলে দাবি করেছিলেন মধুমিতা। তাঁকে দেখেও তেমনই মনে হত, জানিয়েছেন ওই বাড়ির মালিক মীনা দেবী। পুলিশের দাবি, অন্তঃসত্ত্বা প্রমাণ করার জন্য বাইরে বার হলেই পেটে গামছা, বালিশ বেঁধে রাখতেন ওই মহিলা। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আরও নানা অভিযোগ রয়েছে বলেও পুলিশের দাবি। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, শাশুড়ির সই নকল করে জমি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মধুমিতার বিরুদ্ধে। শ্বশুরবাড়ির কারও সঙ্গে সম্পর্কও নেই। তবে দ্বিতীয়বার বিয়ে করার পরেও প্রথম স্বামীর সঙ্গে ফোনে মধুমিতার যোগযোগ ছিল বলে জেনেছে পুলিশ। তাঁর দুই সন্তানের মধ্যে এক জন নবম শ্রেণির ছাত্র, আর এক জন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। রায়নার সহজপুরে বাপের বাড়িতেও যাতায়াত ছিল মধুমিতার। পুলিশ জেনেছে, রবিবার দুপুরে রায়না হাসপাতাল থেকে মাকে ফোন করে ডেকেছিলেন মধুমিতা। কিন্তু তিনি যাননি। এ দিন মধুমিতাদেবীর মা ভারতীদেবী ও বাবা গৌতমবাবু বলেন, “যে মেয়ে আর এক মায়ের কোল খালি দিতে পারে, সে আরও অনেক কিছু পারে। ওর কঠোর শাস্তি হওয়ায় উচিত।’’

পুলিশের দাবি, আলিশা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে রায়না যাওয়ার পথে বিভিন্ন যাত্রীদের কাছ থেকে ফোন চেয়ে নিয়ে এক জনকে ফোন করছিলেন মধুমিতা। তাঁর কাছ থেকে পুলিশ একটি ডায়েরি পেয়েছে। সেখান থেকেই বিভিন্ন নম্বরের হদিস মিলেছে। পুলিশের ধারণা, রায়নার কাউকেই শিশুটি বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। তদন্তকারীদের দাবি, মধুমিতাদেবী জেরায় তাঁদের জানিয়েছেন, তিন লক্ষ টাকা ধার রয়েছে। মা ও স্বামী সব সময় টাকার জন্য চাপ দিতেন। তাই দেড় লক্ষ টাকার লোভে এই ফাঁদ পাতেন তিনি। যদিও পুলিশের একাংশের দাবি, মধুমিতাদেবীমিথ্যা বলছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement