TMC

Shatrughan Sinha: প্রার্থী শত্রুঘ্ন, কারণ নিয়ে চাপান-উতোর

আসানসোলে এত সংখ্যক নেতা থাকতে কেন বেছে নেওয়া হল শত্রুঘ্নকেই?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

আসানসোল ও রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২২ ০৭:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার ঘোষণা করলেন, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন শত্রুঘ্ন সিনহা। হিন্দি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা শত্রুঘ্নের নাম ঘোষণা হতেই ময়দানে দেখা গিয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে। পাশাপাশি, শত্রুঘ্নকে প্রার্থী করা নিয়ে তোপ দেগেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাতে অবশ্য আমল না দিয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, ভোটবাক্সে বিরোধীদের ‘খামোশ’ করে দেবেন শত্রুঘ্ন। তবে, আসানসোলে কেন শত্রুঘ্নকে প্রার্থী করা হল, তা নিয়ে জল্পনা ছিল দিনভর।

Advertisement

শত্রুঘ্নের নাম ঘোষণার পরেই, রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটকের মন্তব্য, “আমরা এক জন খুব ভাল প্রার্থী পেয়েছি। এ জন্য নেত্রীকে ধন্যবাদ। শত্রুঘ্ন এক জন প্রতিবাদী চরিত্র। তিনি আগেও সাংসদ ছিলেন। সে সময় খুব ভাল কাজও করেছিলেন। আমরা প্রচার ও কর্মিসভা শুরু করেছি।” এ দিন বারাবনির পাঁচগাছিয়ায় দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখতে দেখা গিয়েছে দলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়কেও। একই ছবি দেখা গিয়েছে রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর-ফরিদপুর, অন্ডাল-সহ নানা জায়গায়।

কিন্তু শত্রুঘ্নের নাম ঘোষণা হতেই, বিজেপি-তৃণমূলে শুরু হয়েছে টুইট-যুদ্ধ। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য শত্রুঘ্নকে ‘পুরোপুরি বহিরাগত’ তকমা দিয়ে খোঁচা দেন তৃণমূলকে। পাশাপাশি, কানাঘুষোয় প্রার্থী নামের জল্পনায় তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষের নাম শোনা গেলেও, তা কেন হল না, সে প্রশ্নেও কটাক্ষ করেছেন অমিত। যদিও, শক্রুঘ্নেরই জনপ্রিয়-উবাচ ‘খামোশ’ এই শব্দটি উল্লেখ করে টুইটে অমিতকে জবাব দেন সায়নী।

Advertisement

বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা চলছে জেলার রাজনীতিতেও। বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে’র প্রতিক্রিয়া: “বিজেপির বাতিলেরাই তৃণমূলের ভরসা। এখন বহিরাগত লোকজনকে এনে রাজ্যের ভোটে দাঁড় করাচ্ছে ওরা। আমরা এই প্রশ্নে মানুষের কাছে যাব।” ঘটনাচক্রে, আশির দশকে বিজেপি-তে নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন শত্রুঘ্ন। প্রায় চার দশক বিজেপি-তে কাটানোর পরে সাড়ে তিন বছরের জন্য ছিলেন কংগ্রেসে। কিছু দিন আগে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। এই প্রসঙ্গটি তুলে দিলীপের কটাক্ষ: “ওঁর রাজনৈতিক ভাবে কোনও অবস্থানই নেই। মানুষ ওঁকে রাজনৈতিক নেতা হিসাবে বিশ্বাস করেন না।” যদিও, যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে, বিধান বলেন, “ভোটবাক্সেই মানুষ যা
বলার বলবেন।”

কিন্তু আসানসোলে এত সংখ্যক নেতা থাকতে কেন বেছে নেওয়া হল শত্রুঘ্নকেই? এ প্রসঙ্গে, একটি জনপ্রিয় তত্ত্ব হল, এই লোকসভা কেন্দ্রের হিন্দিভাষী ভোট। তৃণমূলের হিন্দি প্রকোষ্ঠের রাজ্য সহ-সভাপতি হরেরাম সিংহ বলেন, “আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে হিন্দিতে কথা বলা ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪৫ শতাংশেরও বেশি।” যে সাতটি বিধানসভা এলাকা নিয়ে এই লোকসভা কেন্দ্রটি তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে কুলটিতে রয়েছেন সর্বাধিক ৫৫ শতাংশেরও বেশি হিন্দিভাষী ভোটার। এর পরে রয়েছে আসানসোল উত্তর বিধানসভা এলাকাটি। সেখানে হিন্দিভাষী ভোটারের সংখ্যা ৫০ শতাংশেরও বেশি। এর পরে রয়েছে পাণ্ডবেশ্বর। সেখানে এই সংখ্যাটা প্রায় ৪৫ শতাংশের আশপাশে। এর আগে নানা ভোটের সময় তৃণমূল ও বিজেপি, দুই শিবিরকেই এই সমীকরণটি খেয়াল রাখতে দেখা গিয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৯-এ বাবুল সুপ্রিয়কে বিজেপির প্রার্থী করার অন্যতম কারণ ছিল, হিন্দি চলচ্চিত্রের গানে গায়ক হিসাবে তাঁর সাফল্য, এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। সে সূত্রেই এ বার আসানসোলের ভোট-ময়দানে শত্রুঘ্ন কি না, তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা। জেলা তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, ‘বিহারীবাবু’ শত্রুঘ্ন তাঁর অভিনয়ের জন্য হিন্দিভাষীদের মধ্যে জনপ্রিয়। যদিও, এ জল্পনায় জল ঢেলে, হরেরামের প্রতিক্রিয়া, “হিন্দিভাষীদের পাশাপাশি, বাংলাভাষীদের মধ্যেও ওঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে ভাষা, ধর্ম নিয়ে আমরা ভেদাভেদ করি না। ওটা করে বিজেপি।” বিজেপি নেতা দিলীপের যদিও প্রতিক্রিয়া, “আমরা সর্বভারতীয় দল। সব স্তরের, সবার সমর্থন নিয়েই আমাদের
পথ চলা।”

এই চাপান-উতোরের মধ্যে শত্রুঘ্নের কাঁধে ভর করে তৃণমূল ভোটবাক্সে বিরোধীদের ‘খামোশ’ করাতে পারে কি না, সেটাই
এখন দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement