এই সেই অ্যাপ। —নিজস্ব চিত্র
শিশু নিগ্রহ ও বাল্যবিবাহ রোধে ‘শিশু সুরক্ষা সাথী’ নামে একটি ‘মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন’ আনল পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন। জেলা সমাজকল্যাণ দফতর এটি চালু করেছে। দফতরের আধিকারিকদের দাবি, শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্যের মধ্যে পশ্চিম বর্ধমানই এ বিষয়ে প্রথম উদ্যোগী হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ‘অ্যাপ’টির উদ্বোধন করেন জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি।
সমাজকল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিক অসীম রায় জানান, শিশু সুরক্ষার বিষয়টি আরও জোরদার করতে এই ‘অ্যাপ’ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এই উদ্যোগ কেন? অসীমবাবু জানান, সাধারণত এলাকাবাসীর কাছ থেকেই প্রশাসন শিশু নিগ্রহ ও নাবালিকা বিয়ের খবর পায়। জেলা প্রশাসনের টোল-ফ্রি নম্বর ১০৯৮-এ ফোন করেও খবর দেওয়া যেত। কিন্তু অনেকেই এই নম্বর জানতেন না বলে খবর পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল। তাই এই ‘অ্যাপ’ চালু করা হয়েছে।
কী ভাবে কাজ করবে এই অ্যাপটি? যে কেউ অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ‘গুগল প্লে স্টোর’ থেকে ‘অ্যাপ’টি ডাউনলোড করতে পারবেন। ‘অ্যাপ’-এর মাধ্যমে ‘স্টপ চাইল্ড লেবার’ ও ‘স্টপ চাইল্ড ম্যারেজ’ অপশনে গিয়ে কেউ খবর পাঠালে তা দ্রুত জেলা সমাজকল্যাণ দফতর এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য সামাজিক সংগঠনের কাছে পৌঁছে যাবে। থাকবে, কোন থানা বা ব্লক এলাকার ঘটনা, সে সব জানানোর সুযোগও। দফতর সূত্রে জানা যায়, খবর পেয়ে, যে এলাকার ঘটনা, সেখানের পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। অসীমবাবুর দাবি, ‘‘রাজ্যের মধ্যে এমন অ্যাপ আমাদের জেলাতেই প্রথম চালু করা হল।’’
শুক্রবার ‘অ্যাপ’-এর উদ্বোধন করে জেলাশাসক বলেন, ‘‘শিশুদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বা বাল্য বিবাহ হচ্ছে, এমন খবর পেলেই দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যাবে এই অ্যাপের মাধ্যমে।’’ সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুদের সুরক্ষার জন্য দফতরের তিনটি বিভাগ রয়েছে— ‘ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিট’ (শিশু সুরক্ষা বিষয়ে প্রকল্প তৈরি ও রূপায়ণের দায়িত্বে), ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’ (স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড-সহ বিভিন্ন স্থান থেকে অনাথ ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত শিশুদের তুলে এনে সুরক্ষা দেবে), ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’ (শিশু সুরক্ষার স্বার্থে যাবতীয় আইনি পদক্ষেপ
করার দায়িত্বে)।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার প্রত্যেক পঞ্চায়েত ও পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটি’ তৈরিতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আটটি ব্লকের প্রতিটি পঞ্চায়েতে এই কমিটি তৈরি করা হলেও আসানসোল পুরসভার ১০৬টি এবং দুর্গাপুর পুরসভার ৪৩টি ওয়ার্ডে এ পর্যন্ত ৩৮টি ‘চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটি’ তৈরি
করা হয়েছে।