কামরুজ্জামান সরকার। ফাইল চিত্র
১২ দিনের পুলিশ হেফাজত। তার মধ্যেই হাবেভাবে বা কথাবার্তায় কালনায় ‘চেন খুন’ কাণ্ডে ধৃত কামরুজ্জামান সরকারের পরিবর্তনটা বেশ চোখে পড়েছে বলে জানালেন তদন্তকারীরা। তাঁরা জানান, হেফাজতের প্রথম দিকে নিজের কাজ নিয়ে খুব একটা ‘অনুতপ্ত’ হতে দেখা যায়নি ধৃতকে। অথচ, হেফাজতের শেষ ক’দিন তাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘যা করেছি, তার জন্য আমার ফাঁসি হওয়া দরকার’, এমনটাই দাবি পুলিশের।
শনিবার ধৃতকে কালনা আদালতে তোলা হয়। ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম উজ্জ্বল ঘোষ ধৃতের জেল-হাজতের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে আগামী ১৭জুন ফের ধৃতকে আদালতে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ন’টি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত কামরুজ্জামানকে নিয়ে এ দিন দুপুর দেড়টায় আদালত চত্বরে ঢোকে পুলিশ। পরনে হলুদ টি-শার্ট, বাদামি প্যান্ট। ধরা পড়ার সময়ে পেটানো চেহারার কামরুজ্জামানকে এ দিন অনেকটাই দুর্বল দেখিয়েছে বলে দাবি আদালতে থাকা লোকজনের।
ধৃতকে আদালতে তোলার ফাঁকেই তদন্তকারী জানান, ধরা পড়ার পরে কোনও রকম ‘অনুতাপ’-এর সুর ধরা পড়েনি কামরুজ্জামানের গলায়। এমনকি, অতিরিক্ত খাবারও চেয়েছে হেফাজতে। সন্ধ্যায় বাড়তি খাবার হিসাবে কখনও তার আবেদন ছিল, চপ-মুড়ি দেওয়া হোক! পুলিশের দাবি, জেরায় বারবার তাদের কাছে সে জানিয়েছিল, ‘আমার জীবনের মায়া নেই।’ এমনকি, একটি ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে যাওয়ার সময়েও তার চলাফেরায় ‘দৃপ্ত’ ভঙ্গি দেখা যায়। এ দিন অবশ্য সেই ‘তেজ’ দেখা যায়নি। আদালতেও দীর্ঘক্ষণ ‘মনমরা’ হয়ে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল।
পুলিশের দাবি, হেফাজতের প্রথম দিকে তার খোশমেজাজ দেখে খানিক তাজ্জব হয়েছিলেন তাঁরা। সম্প্রতি অবশ্য সে বেশ মনমরা। ভীষণ চুপচাপ। প্রথম দিকের কথাবার্তায় বাড়ির কথা তেমন না বললেও সপ্তাহখানেক ধরে বারবার কামরুজ্জামান ছেলেমেয়ের কথা বলেছে বলে জানান তদন্তকারীরা।
এ দিন কামরুজ্জামানের হয়ে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী শুভ্র রায়। জামিনের বিরোধিতা করেন সরকারি আইনজীবী অপূর্ব দাস। পুলিশের তরফে আদালতে জানানো হয়, হাটকালনার খুনের ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে একটি ভোটার পরিচয়পত্র, জামার টুকরো অংশ ও একটি বোতাম উদ্ধার হয়েছে। আদালতে তদন্তকারী অফিসার কামরুজ্জামানের হাতের আঙুলের ছবিও সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি, আদালতের নির্দেশে পুলিশের তরফে এ দিন তাকে সংশোধনাগারেও জেরা করা হয়।
এ দিন আদালত চত্বরে কামরুজ্জামানকে নিয়ে জনতার আগ্রহ ছিল চরম। আদালতে তোলার সময়ে মোবাইলে তার ছবি তুলতেও হুড়োহুড়ি পরে যায়। অনেকে নানা প্রশ্নও ছুড়ে দেন। তবে নিরুত্তর ছিল কামরুজ্জামান।