বন্ধ হয়নি নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার। নিজস্ব চিত্র।
সারা দেশে নির্দিষ্ট গুণমান ছাড়া বাকি প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল ২০১৯-এর ২ অক্টোবর। তার বহু আগে থেকেই দুর্গাপুরে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বন্ধে অভিযান শুরু করে পুরসভা। কিন্তু এত দিন পরেও শহরে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহারে রাশ টানা যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ নাগরিকদের একাংশের।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, প্লাস্টিক মাটি, জল ও বায়ুকে দূষিত করে। মাটিতেও মেশে না। কোনও ব্যাকটেরিয়া প্লাস্টিক ‘ডিকম্পোজ়’ করতে পারে না। আবার পুড়িয়ে দিলে এর মধ্যে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক বাতাসে মিশে দূষণ ছড়ায়। বর্ষায় নর্দমার মুখে জমে নিকাশি সমস্যা ডেকে আনে প্লাস্টিক। দুর্গাপুরে নির্দিষ্ট গুণমান ছাড়া বাকি প্লাস্টিকের প্যাকেট ব্যবহার, উৎপাদন, মজুত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ধরা পড়লে জরিমানার বিধান দেওয়া হয়েছে। এ দিকে, বাজারে ক্রেতা, বিক্রেতা দু’পক্ষকেই জরিমানা করার কথা বলা আছে পুরসভার বিজ্ঞপ্তিতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভা মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও দিন কয়েকের মধ্যেই আবার শুরু হয় প্লাস্টিকের রমরমা ব্যবহার! তবে, সাম্প্রতিক সময়ে সে ভাবে অভিযানও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ শহরবাসীর একাংশের।
বেনাচিতি বাজার থেকে প্লাস্টিক ব্যাগে মাছ ও আনাজ কিনে ডিএসপি টাউনশিপের বাড়িতে ফিরছিলেন সুশোভন বসু। তিনি বলেন, “মাঝে ব্যাগ ছাড়া বাজারে গেলে সমস্যায় পড়তে হত। এখন আর হয় না। কারণ, সব দোকানই প্লাস্টিকের ব্যাগ দেয়।” জরিমানার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কখনও তেমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চণ্ডীদাস বাজারের এক মাছ বিক্রেতা জানান, বহু দিন অভিযান হয় না। তাই খরচ বাঁচাতে বিক্রেতাদের অনেকেই কম দামি প্লাস্টিক ব্যবহার করছেন। বিধাননগরের বাসিন্দা দিলীপ রায় বলেন, “প্লাস্টিক ব্যবহার কমে যাওয়ায় পাড়ার ডাস্টবিনগুলিও অনেক পরিচ্ছন্ন থাকত। এখন আবার প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে যাচ্ছে ডাস্টবিন। বাতাসে উড়ছে।”
এ দিকে, বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “এক বছরের বেশি সময় ধরে নির্বাচিত পুরবোর্ড নেই। সাধারণ নাগরিক পরিষেবাই মিলছে না। সেখানে প্লাস্টিকের দিকে নজর দেবে কে?” বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়
বলেন, “মাত্র পাঁচ জনের প্রশাসকমণ্ডলী দিয়ে ৪৩টি ওয়ার্ডের বিশাল পুর-এলাকায় দিনের পর দিন কোনও ভাবেই পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।” অভিযোগ উড়িয়ে পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারম্যান অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভা মাঝে-মাঝে অভিযান চালায়। কিন্তু সেটাই সব নয়। নাগরিকদের পরিবেশ সচেতন হতে হবে। দ্রুত অভিযান হবে।”