বালি তোলা চলছে মঙ্গলকোটের সাগিরা বালিঘাটে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
বর্ষার কারণে বালি তোলায় এখন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। কিন্তু বালি বোঝাই ট্রাক, ডাম্পার, ট্রাক্টরের দৌড় বন্ধ হয়নি— অভিযোগ পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের বাসিন্দাদের একাংশের। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অজয় থেকে যন্ত্রের সাহায্যে বালি তুলে পাচার করা চলছেই বলে দাবি তাঁদের। শাসক দলের একাংশের মদতেই বেআইনি এই কারবার চলছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও সে অভিযোগ মানতে নারাজ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া পঞ্চায়েতের সাগিরা বালিঘাট লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, দিনকয়েক আগে পর্যন্ত নৌকায় করে বালি তোলা হচ্ছিল। এখন নদীর জল বাড়ায় তা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু পাড়ের জমি থেকে যন্ত্র দিয়ে বালি তোলা চলছেই। বালির গাড়ি চলায় গ্রামের ঢালাই রাস্তাও ভেঙে গিয়েছে। বালি কারবারিদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না বলে দাবি ওই বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি মঙ্গলকোটের কোগ্রামে বাঁধের কাছে গিয়ে দেখা যায়, চরে মাটি কাটার কয়েকটি যন্ত্র রাখা আছে। সেখান থেকে খানিক দূরেই বালি স্তূপ করে রাখা। পাশ দিয়ে একের পরে এক ডাম্পার, ট্রাক ও ট্রাক্টর নদীর চরে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। বালি বোঝাই করার পরে সেগুলি বেরিয়ে যাচ্ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সাগিরা ও কোগ্রামের কিছু বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ‘‘কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের বসতবাড়ি ও সতীপীঠ দেখার জন্য বছরভর পর্যটকেরা এলাকায় আসেন। তাঁদের সুবিধার জন্য গ্রামের রাস্তাঘাট ঢালাই করা হয়েছিল। কিন্তু গত চার বছর ধরে অতিরিক্ত বালি বোঝাই গাড়ি যাতায়াতের জন্য রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’’ তাঁদের দাবি, এই বালি কারবারের পিছনে শাসক দলের কিছু লোকজনের মদত রয়েছে। সে কারণে প্রকাশ্যে গ্রামের কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেন না।
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা মঙ্গলকোটের নেতা রানাপ্রতাপ গোস্বামীর অভিযোগ, ‘‘শুধু সাগিরা নয়, বেশ কয়েকটি জায়গা থেকেই তৃণমূলের লোকজন বেআইনি ভাবে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে বালি পাচার করছে। তাতে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি হলেও প্রশাসন নিশ্চুপ।’’ মঙ্গলকোটের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক শাজাহান চৌধুরীরও অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের নেতারাই নেপথ্যে থেকে বেআইনি বালি পাচারে মদত দিচ্ছেন। অতিরিক্ত বালি বোঝাই ডাম্পার ও ট্রাক চলাচলে গ্রামের রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। গ্রামবাসী ভয়ে কিছু বলতে পারেন না।’’
যদিও মঙ্গলকোট ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী দাবি করেন, ‘‘আমাদের কেউ বালিঘাটের সঙ্গে যুক্ত নন। বিরোধীরা রাজনীতি করতে এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।’’
মহকুমাশক (কাটোয়া) প্রশান্তরাজ শুক্লের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে বালি তোলা বরদাস্ত করা হবে না। বিষয়টি নিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে কথা বলব। উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার পরেও কিছু জায়গায় যন্ত্র নামিয়ে বালি তোলা হচ্ছে বলে খবর মিলেছে। তাতে রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি, নদীরও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে কোনও সময়ে অভিযান চালানো হবে।