সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে রেল রিক্রিয়েশন ক্লাবে। নিজস্ব চিত্র
প্রায় চার দশক ধরে শহরের সংস্কৃতিচর্চার বড় ভরসা ভবনটি। কাটোয়ায় রেলের সেই রিক্রিয়েশন ক্লাব ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। তাতে উদ্বিগ্ন এলাকার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজন। রেলের কর্তাদের অবশ্য আশ্বাস, সেখানে দোতলা একটি ভবন তৈরি করা হবে, যার প্রথম তলাটি আগের মতোই ব্যবহৃত হবে।
কাটোয়া স্টেশন ঢোকার মুখে এই ভবনে ছিল প্রায় ২২ মিটার চওড়া ও ৩২ মিটার লম্বা হলঘর। প্রথমে কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য তৈরি হলেও পরে এলাকাবাসীর সংস্কৃতিচর্চার জায়গা হয়ে ওঠে এটি। এলাকার কিছু বাসিন্দার উদ্যোগে ১৯৮৪ সালে একটি সাংস্কৃতিক সংস্থাও তৈরি হয়। দীর্ঘদিন সেই সংস্থার সহ-সম্পাদক পদে থাকা অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রেলের তরফে সংস্কৃতিচর্চার জন্য বছরে হাজার টাকা সাহায্য করা হত। তা যথেষ্ট না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের উদ্যোগে এখানে সংস্কৃতিচর্চা করতেন। তবে এই হলে অনুষ্ঠান করার জন্য কখনও কোনও টাকা দিতে হয়নি এলাকাবাসীকে।’’
রেল সূত্রে জানা যায়, সেখানে একটি গ্রন্থাগারও ছিল। বছর বারো আগে অর্থের অভাবে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে বছরভর নানা অনুষ্ঠান হত। ১৯৮৫ সাল থেকে পরপর তিন বছর ‘সারা বাংলা টেবিল টেনিস’ প্রতিযোগিতাও হয়েছিল। হলঘরে দু’টি টেবিল টেনিস বোর্ড থাকত। ক্যারম খেলাও হত। সংস্কৃতির পাশাপাশি ক্রীড়াচর্চাও চলত। স্টেশনবাজারের জয়শ্রী সঙ্ঘের উদ্যোগে ১৯৮১ সালে সাত দিনের নাটক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। কাটোয়ার প্রবীণ বাসিন্দা অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কাটোয়ার ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে রেল রিক্রিয়েশন ক্লাবের বড় ভূমিকা ছিল।’’
অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘তৎকালীন কাটোয়া কলেজের অধ্যক্ষ হরিদাস সরকার নাটক আয়োজনে যুক্ত থাকতেন। রেলকর্মীদের উদ্যোগেও নানা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন হত।’’ প্রাক্তন রেলকর্মী জগন্ময় মিত্র জানান, টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় অনেক নামী খেলোয়াড় যোগ দিয়েছেন এখানে। গত বছর পর্যন্ত নিয়মিত রক্তদান শিবির, রবীন্দ্রজয়ন্তী, বিজয়া সম্মেলনি অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আয়োজন হত।
রেল কর্তৃপক্ষ জানান, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হলটি ভেঙে যাচ্ছিল। ছাদ ফেটে জল পড়ছিল। স্টেশন-সহ আশপাশের অন্য নির্মাণ উঁচু হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টিতেই ভবনে জল ঢুকে যেত। জানলা, দরজাও বেহাল হয়ে পড়েছিল। রেলের যাত্রী কমিটির তরফ সানি আজাদ বলেন, ‘‘এই হলটি সংস্কারের জন্য গত বছর ১০ মার্চ হাওড়ার ডিআরএমের কাছে আর্জি জানানো হয়। এ ছাড়া একটি যাত্রিনিবাস তৈরির দাবিও জানানো হয়।’’
রেল সূত্রে জানা যায়, সংস্কারের জন্য ভবনটি দিন চারেক আগে ভাঙা শুরু হয়েছে। কাটোয়ার স্টেশন ম্যানেজার অরূপ সরকার বলেন, ‘‘ওখানে একটি দোতলা ভবন নির্মাণ হবে। তার একতলায় আগের মতোই হলঘর থাকবে। এত দিন যেমন স্থানীয় বাসিন্দারা ওই হল ব্যবহার করতেন, এর পরেও তা করতে পারবেন। ভবনের দোতলায় রেলের আধিকারিকদের বিশ্রামকক্ষ তৈরি করা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, নতুন ভবনে একটি মঞ্চও তৈরি করা হবে। দ্রুত ভবন সংস্কারের কাজ শেষ হবে বলে তাঁর আশ্বাস।