ডিপিএল গেটের সামনে। — নিজস্ব চিত্র
ডিপিএলের বন্ধ কোকআভেন প্ল্যান্টের কর্মী এবং পাওয়ার প্ল্যান্টের অতিরিক্ত কর্মীদের বিভিন্ন জেলার সরকারি দফতরে বদলির সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ ভাবে সরকারি একটি সংস্থাকে কার্যত পঙ্গু করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার ডিপিএলে বিক্ষোভ দেখায় সিটু, বিএমএস প্রভৃতি শ্রমিক সংগঠন।
কোকআভেন প্ল্যান্ট ২০১৫ সালের ৩ জুন বন্ধ হয়। সে বছর নভেম্বরে তৎকালীন বিদ্যুৎ মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত টেন্ডার ডেকে নতুন করে প্ল্যান্ট চালুর নির্দেশ দেন। কিন্তু তা আর হয়নি। টানা লোকসানে চলা ডিপিএলকে বাঁচাতে রাজ্য সরকার অন্য বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৯-এর ১ জানুয়ারি থেকে ডিপিএলের মালিকানা যায় পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের হাতে। শুরু হয় উদ্বৃত্ত কর্মী কমানোর উদ্যোগ। বন্ধ কোকআভেন প্ল্যান্টের প্রায় ২৫৯ জন কর্মীকে অন্যত্র বদলির উদ্যোগ শুরু হলেও, তা সে ভাবে কার্যকর হয়নি। ২০২১-এর নভেম্বরে অর্থ দফতরের অনুমোদন নিয়ে বিদ্যুৎ দফতরের তরফে নির্দেশিকা দেওয়া হয়, ওই কর্মীদের অন্য সরকারি দফতরে বদলি করা হবে। ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, কোকআভেন প্ল্যান্ট ছাড়াও পাওয়ার প্ল্যান্টের বিভিন্ন বিভাগেও অতিরিক্ত কর্মী রয়েছেন। সম্মিলিত তালিকা তৈরি করে তাঁদের অন্য সরকারি দফতরে বদলির নির্দেশিকা এসেছে ২২ ডিসেম্বর।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩৩২ জন কর্মী রয়েছেন ওই তালিকায়। তাঁদের পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম ও বাঁকুড়া জেলায় নানা সরকারি দফতরে বদলির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৬২ জনকে দুই বর্ধমান ও বাঁকুড়ার খাদ্য দফতরে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদে বুধবার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখান ডিপিএলে। সিটু নেতা রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এ ভাবে ডিপিএলের কর্মীদের অন্য দফতরে বদলি করা যায় না। এর ফলে ‘সার্ভিস কন্ডাক্ট রুল’ অমান্য করা হচ্ছে। ডিপিএলের অন্দরেই নিরাপত্তা দফতর, খনি-সহ পাওয়ার প্ল্যান্টের বিভিন্ন বিভাগে শূন্যপদ রয়েছে। তাঁদের সেখানে পাঠানো হোক।’’
বিএমএস নেতা নিমাই কর্মকার জানান, তিনি ‘কোল প্রোকিওরমেন্ট অ্যান্ড অ্যাশ ডিসপোজাল’ বিভাগের কর্মী। বুধবার সকালে আচমকা তিনি বাঁকুড়ার খাদ্য বিভাগে বদলির নির্দেশ পেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা শিল্পে প্রযুক্তিগত কাজ করি। অন্য দফতরে কী করে কাজ করব? ডিপিএলে কী ভাবে আমাদের কাজে লাগানো যায়, সেটা ভাবা দরকার।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ডিপিএলের জমি বিক্রি করার জন্য রাজ্য সরকার এ ভাবে সংস্থাকে পঙ্গু করে দিতে চাইছে।’’ বিএমএস নেতা অর্কপ্রভ রায়ের দাবি, ‘‘বদলি করার আগে তিন মাস সময় দিতে হবে। নির্দেশিকা দিয়ে সেই কর্মী কী সুবিধা পাবেন তা জানাতে হবে। বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে। পিএফ, বিমা, মেডিক্যাল-সহ নানা বিষয় চূড়ান্ত করতে হবে।’’
আইএনটিটিইিউসি নেতা কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ডিপিএলের উদ্বৃত্ত কর্মীদের কারও চাকরি যাবে না। অতিরিক্ত কর্মীদের সরকারেরই অন্য দফতরে বদলি করা হচ্ছে। ডিপিএলের পুনরুজ্জীবনের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। বিরোধীরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে পুরসভা ভোট মাথায় রেখে।’’ ডিপিএলের জনসংযোগ আধিকারিক স্বাগতা মিত্র বলেন, ‘‘সরকারের সম্মতি নিয়েই কোকআভেন প্ল্যান্টের কর্মী এবং অন্য অতিরিক্ত কর্মীদের সরকারি বিভিন্ন দফতরে বদলি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকেরা যেখানে যেমন মনে করবেন, সে দফতরে কাজে লাগাবেন তাঁদের। এ ভাবেই ঘুরে দাঁড়ানোরচেষ্টা চলছে।’’