পঞ্চায়েত কার্যালয় থেকে চলছে জল বিক্রি। নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের রানিগঞ্জের একাধিক গ্রামে জল কিনে খেতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। আর সেই পরিশ্রুত পানীয় জল বিক্রি হচ্ছে খোদ পঞ্চায়েত কার্যালয় থেকেই। বিজেপির অভিযোগ, মানুষকে পরিষেবা না দিয়ে মানুষকে লুটছে তৃণমূল।
শহর বা মফস্সলে অনেকেই জল কিনে খান। কিন্তু একই ঘটনা যদি ঘটে গ্রামাঞ্চলে! সেখানে তো নিখরচায় পানীয় জল পাওয়ার কথা। যদিও আসানসোলের রানিগঞ্জের একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ বাধ্য হয়ে জল কিনে খাচ্ছেন। আর সেই জল বিক্রি করছে খোদ জেমারি গ্রাম পঞ্চায়েত। ওই এলাকাতেই একটি সরকারি পানীয় জল প্রকল্পের কাজও চলছে। কিন্তু অভিযোগ, সেই প্রকল্পের কাজ এতই ঢিমেতালে চলছে যে, তা কবে শেষ হবে, কেউ জানে না। অতএব, জল কিনে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই গ্রামবাসীদের কাছে।
বেশ কয়েক বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা জেমারি পঞ্চায়েত কার্যালয়ে রিভার্স অসমোসিস (আরও) প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি পরিশ্রুত পানীয় জলের প্ল্যান্ট বসিয়েছিল। তারা জল দিত বিনামূল্যে। পরে বেসরকারি সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকেই সেই প্ল্যান্ট ব্যবহার করে লিটার প্রতি ৪০ পয়সা দরে পানীয় জল বিক্রি করছে জেমারি পঞ্চায়েত।
জেমারি পঞ্চায়েতের প্রধান শিল্পী মাজি বলেন, ‘‘যে বেসরকারি সংস্থা এই প্রকল্প বানিয়েছিল, তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেই প্রকল্পটিই চালু রাখা হয়েছে। এতে কয়েক জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। অনেকেই জল কিনে নিয়ে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করেন। এতে কিছু রোজগার হয়।’’
পঞ্চায়েত প্রধানের আরও দাবি, প্ল্যান্টের রক্ষণাবেক্ষণ এবং তিন জন কর্মীর বেতনের জন্য যা অর্থ লাগে, তা জল বেচে তোলা হয়। এর মধ্যে ব্যবসায়িক লাভের কোনও ব্যাপার নেই। যদিও তা মানতে নারাজ বিরোধীরা। বিজেপি নেতা সঞ্জয় যাদব বলেন, ‘‘পয়সা নিয়ে পঞ্চায়েত অফিস থেকে মানুষকে জল বিক্রি করা হচ্ছে! এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে। তৃণমূল মানুষের কাজ কিছু করে না, তাই ভোটের সময় ভোট লুট করতে হয়। এটাই তৃণমূল।’’
পরিশ্রুত পানীয় জল কেনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া স্থানীয়দের মধ্যে। স্থানীয় বাসিন্দা সোনেলাল দুসাদ বলেন, ‘‘বাজারে জল কিনতে ২০-৩০ টাকা লাগে। এখানে ১৫ টাকায় ৩০ লিটার হয়ে যায়।’’ যদিও অন্য এক গ্রামবাসী তাপস মাজি বলেন, ‘‘জলটা খুব ভাল। কিন্তু বাড়ির দরজায় কল থাকলে আরও ভাল হত।’’ জল বিক্রি করেই সংসার চলছে বলে দাবি গোবিন্দ কিস্কুর। তিনি বলেন, ‘‘৮ টাকায় এক জার জল কিনে ২০ টাকায় বিক্রি করি। এতে আমার সংসার চলে যায়।’’