Kali Puja 2023

পূর্বপুরুষের লেখা পুঁথি পাঠ করে পুজো হয় বনকাটিতে

রায় পরিবারের প্রবীণ সদস্য অনিলকুমার রায় জানান, পূর্বপুরুষের লেখা পুঁথি পাঠ করে কালীর পুজো হয় এখনও। পুজো শুরু হওয়ার আগে শ্মশানে ক্রিয়াকর্ম সারতে হয়।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

কাঁকসা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৩
Share:

বাঁ দিকে, বনকাটির রায় পরিবার ও ডান দিকে, মানকরের কবিরাজ বাড়ির প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুজো হোক বা কালীপুজো, কাঁকসার বনকাটি ও বুদবুদের মানকরে পারিবারিক পুজোই বিখ্যাত। পারিবারিক কালীপুজো ঘিরেও রয়েছে নানা কাহিনী। তেমনই কাঁকসার বনকাটির রায় পরিবারের পুজো। যা প্রায় ৯০০ বছরের পুরনো।

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসার গড় জঙ্গলে আধিপত্য গড়ে উঠেছিল সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের আমলে। তখন অজয় নদ ছিল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। জলপথ দিয়ে নৌকা, জাহাজ যাতায়াত করত। অজয়কে কেন্দ্র করে দু’পাশে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। কথিত আছে, সে সময় এক বার অজয় দিয়ে যাচ্ছিলেন বল্লাল সেনের কুলগুরু, তান্ত্রিক মহেশ্বরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। যাওয়ার সময়ে তাঁদের নৌকা বিকল হয়ে যাওয়ায়, বর্তমান বনকাটি গ্রামের কাছে নেমে পড়েন মহেশ্বরপ্রসাদ। তখনও জনবসতি গড়ে ওঠেনি। জঙ্গলে ঘেরা এই জায়গায় গাছ কেটে তিনি বসবাস শুরু করেন। সেই থেকেই গ্রামের নাম হয় বনকাটি। এখানে বসবাস করার পাশাপাশি, তিনি শুরু করেন কালীপুজো। সেই পুজো এখনও চলে আসছে একই রীতিতে। পরিবার সূত্রের দাবি, পরবর্তীতে বৃটিশদের সঙ্গে কোনও একটি মামলায় জড়িয়ে পড়েন মহেশ্বরপ্রসাদের বংশধরেরা। আদালতের রায়ে জয়ী হয়ে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার রায়বাহাদুর খেতাব অর্জন করেন। তখন থেকে বন্দ্যোপাধ্যায় পদবি বদলে রায় পরিবার পরিচিতি লাভ করেন।

রায় পরিবারের প্রবীণ সদস্য অনিলকুমার রায় জানান, পূর্বপুরুষের লেখা পুঁথি পাঠ করে কালীর পুজো হয় এখনও। পুজো শুরু হওয়ার আগে শ্মশানে ক্রিয়াকর্ম সারতে হয়। সম্পূর্ণ পুজো তান্ত্রিক মতে হয়। নিশিরাতে হোম-যজ্ঞ হয়। যজ্ঞে এক হাজার আটটি বেলপাতা ও পাঁচ কেজি ২৫০ গ্রাম গাওয়া ঘি পোড়ানো হয়। তিনি বলেন, “আশপাশের বহু মানুষ পুজো দেখতে আসেন। নরনারায়ণ সেবা করা হয় প্রতি বছর। মন্দিরে রায় পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ থাকতে পারেন না।”

Advertisement

মানকরের কবিরাজ বাড়ির কালীপুজো ৩০০ বছরের বেশি পুরনো। এই কালী ‘আনন্দময়ী’ নামে পরিচিত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারের রাজবল্লভ গুপ্ত ছিলেন বর্ধমানের রাজা উদয়চাঁদের কবিরাজ। রাজার মেয়েকে সুস্থ করে তোলায় রাজাবল্লভকে মানকরে কিছু জমি দেওয়া হয় এবং তিনি মানকরে বসবাস শুরু করেন। তিনিই এই পুজো প্রচলন করেন। কষ্টিপাথরের মূর্তি নিয়ে আসা হয় কাশী থেকে। প্রায় সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার এই মূর্তি। সেই মূর্তি পরে দুষ্কৃতীরা চুরি করতে আসে। তা করতে চুরি করতে না পেরে, নষ্ট করে দিয়ে যায় তারা। পরে পুননির্মাণ করা হয় সেই মূর্তি।
পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন পরিবারের গোপাল কবিরাজ, সুরজিৎ গুপ্ত, অভিজিৎ গুপ্তেরা। তাঁরা জানান, প্রতি বছর পুজোর আগে মায়ের ‘অঙ্গরাগ’ হয়। অর্থাৎ মাকে রং করানো হয়। এই সময়ে কবিরাজ বাড়ির লোকেরা মন্দিরে ঢোকেন না। এখানে পুজো সন্ধ্যার মধ্যেই সম্পন্ন করতে হয়। কালীপুজোর দিন ১৯ সের চালের নৈবেদ্য দেবীকে নিবেদন করা হয়। পরের দিন দেওয়া হয় পাঁচ সের চালের নৈবেদ্য।

মানকরের ভট্টাচার্য পাড়ায় বড় বাড়ির কালীপুজো ৫০০ বছরের বেশি পুরনো। কথিত আছে, নীলাচলে যাওয়ার সময়ে শ্রীচৈতন্যদেবের পায়ে কাঁটা ফোটে। অসুস্থতা বোধ করলে, তিনি বিশ্রামের প্রয়োজন মনে করেন। এখানে এসেই তিনি বিশ্রাম নেন। সেই সময়ে তিনি সন্ধান পান এই মন্দিরের। যার নীচে পঞ্চমুণ্ডির আসন রয়েছে। আগে মোষ, মেষ ও ছাগ বলি হত। পরিবারের দুই পূর্বপুরুষ কালাজ্বরে মৃত্যুর পরে, এই বলি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে আঁখ ও চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। প্রাচীন ছাঁচে বংশপরম্পরায় বড় বাড়িতে মূর্তি তৈরি করেন কারিগরেরা। পুজোর দায়িত্বে থাকা মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়েরা জানান, পুজো উপলক্ষে প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা থাকে। স্থানীয়েরা ছাড়াও, বাইরে থেকে বহু মানুষ প্রসাদ গ্রহণ করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement