পাচার রুখতে কড়া ব্যবস্থার দাবি

বর্ষায় বালি তোলা বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু বালির ট্রাক ছুটছেই জেলার নানা প্রান্তে। বেআইনি বালি কারবারের জেরে বিভিন্ন জলপ্রকল্প সঙ্কটে, নানা রাস্তা ভাঙছে বলে অভিযোগ। কী বলছেন শিল্পাঞ্চলবাসী, কী ভাবছে প্রশাসন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।চলতি অর্থবর্ষে এপ্রিল থেকে অগস্টের মধ্যেই প্রায় তিন কোটি ১৮ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫৯
Share:

ফাইল চিত্র।

বেআইনি বালি পাচার বন্ধে অভিযানে নেমে জরিমানা বাবদ আয় বেড়েছে, দাবি প্রশাসনের। কিন্তু অভিযানের ফলে বালি তোলা বন্ধ হচ্ছে কি না, প্রশ্ন তুলছেন পাণ্ডবেশ্বর থেকে বারাবনি, নানা এলাকার বাসিন্দারা। বর্ষাতেও বালি তোলা বন্ধ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাঁদের। আর তার জেরে পড়তে হচ্ছে নানা রকম সমস্যায়।

Advertisement

পশ্চিম বর্ধমান জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার উত্তরে অজয় ও দক্ষিণে দামোদরে মোট ২২টি বৈধ বালিঘাট আছে। দফতরের কর্তারা জানান, বেআইনি বালি কারবার রুখতে অভিযান চালিয়ে গত অর্থবর্ষে অবৈধ ভাবে মজুত ও গাড়িতে অতিরিক্ত (ওভারলোডিং) বোঝাই করে পাচারের অভিযোগে প্রায় দু’কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে এপ্রিল থেকে অগস্টের মধ্যেই প্রায় তিন কোটি ১৮ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে।

বেআইনি কারবার ধরে সরকারের ঘরে রাজস্ব বাড়লেও বালি বোঝাই গাড়ি চলাচলের জেরে এলাকার রাস্তাগুলির দফারফা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নানা এলাকার বাসিন্দারা। অভিযোগ, তিরাট থেকে হাড়াভাঙা ও রানিগঞ্জ, বেলডাঙা থেকে পাণ্ডবেশ্বর, মাধাইপুর, অণ্ডালের পুবরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মদনপুর শ্মশানঘাটের রাস্তা ভেঙেচুরে গিয়েছে। জামুড়িয়ার পিওর শ্যামলা, বারাবনির রুনাকুড়া ঘাট, হিরাপুরের সূর্যনগর থেকে কালাঝরিয়া, জামুড়িয়ার সিদ্ধপুর, বাগডিহা, চুরুলিয়া-সহ নানা জায়গায় গোটা চল্লিশ ঘাট থেকে বালি নিয়ে গাড়ি ছুটতে থাকায় রাস্তা বেহাল হচ্ছে।

Advertisement

হাড়াভাঙার বাসিন্দা পরিমল গোপের অভিযোগ, ‘‘পাকা রাস্তা বালিতে ভরে থাকে। তার ফলে ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই থাকে।’’ মাস তিনেক আগে অণ্ডালের পুবরা ঘাটে স্নান সেরে ছেলের সঙ্গে স্কুটিতে বাড়ি ফেরার সময়ে দুর্ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যু হয়। রোষ পড়ে বালি বোঝাই গাড়িগুলির উপরে। জনতা বালিঘাটে কয়েকটি ট্রাক-ডাম্পারে ভাঙচুর চালায়। রানিগঞ্জের বল্লভপুরে বেআইনি ভাবে বালি পাচারের অভিযোগে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এলাকাবাসী।

ডিওয়াইএফের রানিগঞ্জের নেতা সাগর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১৯৭৮ সালের বন্যায় রানিগঞ্জের নূপুর গ্রামে দামোদরের পাড় ভেঙে গিয়েছিল। পরে রানিগঞ্জের তৎকালিন বিধায়ক হারাধন রায়ের উদ্যোগে পাড় বাঁধানো হয়েছিল। সাগরবাবু অভিযোগ করেন, বালি মাফিয়ারা সেই বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরি করে বালি পাচার করছে। এর জেরে গোটা গ্রাম ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা গ্রামের বাসিন্দা সাধন দাস অভিযোগ করেন, অজয়ের পাণ্ডবেশ্বর সেতুর অদূরে রামনগরের কাছে পাণ্ডমুনির আশ্রমের সামনে সারা বছর বেআইনি ভাবে বালি তোলা চলছে। তার জেরে এলাকায় জল সঙ্কট বাড়ছে।

প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, বালি কারবার আটকাতে নিয়মিত অভিযান চলছে। কিন্তু অনেক এলাকাতেই বাসিন্দাদের অভিযোগ, কিছু বালির গাড়ি আটকে জরিমানা করা ছাড়া এই কারবার পুরোপুরি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে না প্রশাসন। শুধু রাস্তা খারাপ নয়, বিভিন্ন জায়গায় জলপ্রকল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement