মাটি ধসে খাদে ডাম্পার। নিজস্ব চিত্র
সম্প্রতি ধসের জেরে বাড়ি-সহ মহিলার ভূগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল অণ্ডালের জামবাদে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার, পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনির জামগ্রামে ধসের জেরে ভূপৃষ্ঠ থেকে অন্তত ৬০ ফুট গভীরে পড়ে গেল কয়লাবোঝাই দু’টি ডাম্পার। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। এর জেরে এক ডাম্পার চালক গুরুতর জখম হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় রুইদাস জানান, রাতে বিকট শব্দ শুনে তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন, প্রায় ১৫ ফুট চওড়া এলাকায় ধসে নেমেছে। খাদে পড়েছে দু’টি ডাম্পার।
ইসিএল-এর আধিকারিকেরা জানান, বৃহস্পতিবার যেখানে ধস নামে, সেখান থেকে কিছুটা দূরে বেগুনিয়া খোলামুখ খনির একটি ‘প্যাচ’ থেকে বছরখানেক ধরে কয়লা তুলছে ইসিএল অনুমোদিত একটি ঠিকা সংস্থা। খবর পেয়ে ওই সংস্থাটিই এক ডাম্পার চালককে উপরে তোলে। অন্য ডাম্পারটিতে চালক ছিলেন না। উদ্ধারের পরে দেখা যায়, ওই চালক গুরুতর জখম। তাঁকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। খননের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই ঠিকা সংস্থাটি শুক্রবার রাত পর্যন্ত ডাম্পার দু’টি তোলার চেষ্টা করছে।
কেন ধস নামল, তা নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, সম্ভবত খননকার্যের জন্য ভূগর্ভের মাটি আলগা হয়ে গিয়েছে। ফলে, তা মাটির উপরিভাগ ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়েছে। খবর চাউর হওয়ার পরে, শুক্রবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলের আশপাশে ভিড় জমান এলাকাবাসী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, কয়লা তোলার জন্য উচ্চ ক্ষমতার বিস্ফোরক ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্ষায় খনির মাটি আলগা হয়ে যাওয়ায় সহজেই ধস নামছে।
বিজেপি নেতা রবীন সূত্রধরের অভিযোগ, “বিস্ফোরণের জেরে আশপাশের বাড়ি দুলে উঠছে। বৃহস্পতিবার রাতেও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরকের সাহায্যে কয়লা তোলা হয়। ইসিএল-কে বিষয়টি বারবার বলা হলেও লাভ হচ্ছে না।” তৃণমূল নেতা অসিত সিংহের দাবি, “বেসরকারি আমলে মালিকেরা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে কয়লা তুলেছেন। সেই সুড়ঙ্গগুলি ভরাট করা হয়নি। এখন তাই ধস নামছে।”
এ দিকে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ডাম্পারগুলি কাদের, ডাম্পার চালকের পরিচয় কী, তা নিয়ে কিছু জানাতে পারেনি ইসিএল। তবে ঘটনাস্থলটি যে ইসিএল-এরই ‘লিজ় হোল্ড’ এলাকা, তা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইসিএল-এর সালানপুর এরিয়ার জিএম অমিতাঞ্জন নন্দী। তাঁর দাবি, “এখানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয় না। বৃহস্পতিবার রাতেও তা ব্যবহার করা হয়নি। ধস নামার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”