Cluster

বিপণনের অভাব, ধুঁকছে কেতুগ্রামের দুই ‘ক্লাস্টার’

এই ক্লাস্টার তৈরির কথা শোনান শ্যামলী ভট্টাচার্য। তিনি জানান, ন’বছর আগে কোমরপুর দক্ষিণপাড়ার তিনটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কয়েক জন মহিলা শুরু করে কাঁথাস্টিচের কাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৪৬
Share:

সেলাইয়ে নকশা তুলছেন মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

শাড়ি, কুর্তি বা চুড়িদারের উপরে ওঁরা ফুটিয়ে তোলেন নানা ধরনের নকশা। কিন্তু কেতুগ্রামের ‘কোমরপুর কাঁথাস্টিচ অ্যাক্টিভিটি ক্লাস্টারে’র সদস্য মহিলারা জানান, বিপণনের অভাবে তাঁদের শ্রম কার্যত জলে যাচ্ছে। একই হাল লাগোয়া শান্তিনগরের বালাপোশ প্রস্তুতকারীদের।

Advertisement

এই ক্লাস্টার তৈরির কথা শোনান শ্যামলী ভট্টাচার্য। তিনি জানান, ন’বছর আগে কোমরপুর দক্ষিণপাড়ার তিনটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কয়েক জন মহিলা শুরু করে কাঁথাস্টিচের কাজ। সাধ্যমতো সঞ্চয় করেন তাঁরা। তার পরে ঋণ মিললে হত কাজ। কিন্তু এতে মুনাফা আশানুরূপ না হওয়ায় ২০১৪-য় প্রশিক্ষক অসীমকুমার ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে আরও পাঁচটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই কাজে যোগ দেয়। ৮০ জন মহিলাকে নিয়ে তৈরি হয় এই ক্লাস্টারটি।

বোলপুরের এক মহাজনের কাছ থেকে মটকা, ব্যাঙ্গালোর সিল্ক, তসর-সহ নানা ধরনের কাপড় ও নকশার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিনে আনেন ক্লাস্টারের সদস্য চিন্তা ঘোষ। তার পরে থেকে সুচ-সুতো হাতে কাপড়ে নকশা ফুটিয়ে তোলেন প্রিয়াঙ্কা মাজি, তৃপ্তি ঘোষেরা। তাঁরা জানান, নকশার জন্য একটি শাড়িতে এক থেকে তিন মাস, চুড়িদার বা কুর্তি প্রতি তিন থেকে সাত দিন সময় লাগে। অনেকে ‘গুজরাতি নকশা’র কাজও করেন। ‘‘তবে মজুরি খুবই কম। মাসভর কাজ করে হাজার থেকে ১,২০০ টাকা ঘরে তুলি,’’ আক্ষেপ প্রিয়াঙ্কাদেবী, মৌমিতা মাঝি, শ্রাবণী ঘোষ-সহ ক্লাস্টারের সদস্যদের।

Advertisement

এই হালের জন্য সরকারি সহযোগিতা না পাওয়াকেই দায়ী করছেন ক্লাস্টারের সদস্যদের বড় অংশ। শ্যামলীদেবী বলেন, ‘‘আমাদের কাজ করার জন্য একটা ঘর দরকার। মহাজনের মাধ্যমে বিক্রির ফলে বরাত বা লাভ, কোনওটাই বেশি নয়।’’ এমনকি, এই ক্লাস্টার ‘সফট টয়’ তৈরি করত। কিন্তু পুঁজি, বিপণনের অভাবে সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আক্ষেপ শ্যামলীদেবীর।

একই ছবি পাশের শান্তিনগর গ্রামেও। সেখানে সাতটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৭০ জন মহিলা বালাপোশ তৈরি করেন। তাঁরাও জানান, পুঁজির অভাবে লাভের মুখে দেখা হয় না।

সম্প্রতি কোমরপুরের ক্লাস্টারের কাজকর্ম পরিদর্শন করেছিলেন জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী। তাঁর কাছ থেকে বিপণনের জন্য সরকারি আশ্বাস মিলেছে, জানান ওই ক্লাস্টারের সদস্যেরা। বিডিও (‌কেতুগ্রাম ১) বনমালী রায় জানান, ‘‘কোমরপুরের ক্লাস্টারটির জন্য মুরগ্রাম-গোপালপুর পঞ্চায়েতে বসার জায়গা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বিপণন বাড়লে দু’টি ক্লাস্টারের জন্যই কিসান মান্ডির ঘর দেওয়া হবে। শান্তিনগরে ‘রুরাল আন্ত্রপ্রেনর হাব’ তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে।’’ ব্লক প্রশাসন জানায়, গোষ্ঠীগুলিকে ঘর তৈরি করে তাদের সেলাই মেশিন দেওয়া হবে। বছরে ছ’মাস যখন বালাপোশ তৈরির কাজ থাকবে না, তখন বালাপোশ প্রস্তুতকারীদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement