লতা মঙ্গেশকর। ফাইল চিত্র।
১৯৮৩-র ২৭ নভেম্বর। দুর্গাপুর শহরের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সঙ্গীত-জলসায় আসবেন লতা মঙ্গেশকর। আয়োজকেরা ঠিক করেছিলেন, ২০ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে টিকিট বিক্রি করা হবে। কিন্তু ১৯ নভেম্বর বিকেল থেকেই টিকিটের লাইনে ভিড় জমে যায়। শেষমেশ ২০ নভেম্বর ভোর ৫টা থেকে শুরু হয় টিকিট বিক্রি!
— রবিবার লতার প্রয়াণ-সংবাদ শুনে, ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক, ডিএসপি টাউনশিপের এ-জ়োনের হস্টেল অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত প্রবীণদের মনে এ সব স্মৃতিরই আনাগোনা।
প্রতি বছরই ওই ক্লাবটি এমন সঙ্গীত জলসার আয়োজন করত। আসতেন কলকাতা, মুম্বই-সহ নানা জায়গার নামী শিল্পীরা। ১৯৮৩-র জলসাটি আয়োজিত হয় স্টিল হাউজ় মাঠে। দর্শকাসন ছিল, ২০ হাজার। ৩০, ৫০, ১০০, ১৫০ ও ২০০ টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা ছিল।
সে সময় টিকিট বিক্রির বিষয়টি দেখতেন ক্লাবের তৎকালীন সক্রিয় কর্তা ডিএসপি-র ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের কর্মী শঙ্কর রায়। তিনি বলেন, “দর্শকাসনে বসে লতার ওই অনুষ্ঠান দেখেছিলেন, রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যসচিব রথীন সেনগুপ্ত। সম্ভবত রাজ্যে এটিই ছিল লতা মঙ্গেশকরের একমাত্র ‘ওপেন এয়ার’ জলসা।”
ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ নভেম্বর রাত ১০টা থেকে শুরু হয় জলসা। শেষ হয়, ভোর ৫টায়। ১০টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত ছিল লতার অনুষ্ঠান। কখনও একক, কখনও ডুয়েট। টানা তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠান শেষে তিনি নেমে আসেন মঞ্চ থেকে। লতার অনুষ্ঠান হওয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল খুবই আঁটোসাঁটো। কিন্তু তার পরেও, মাঠের বাইরে থেকে অনেকে অনুষ্ঠান দেখেন নিরাপত্তা বেষ্টনির ফাঁক দিয়ে।
লতা সে দিন গেয়েছিলেন ‘আজা তুজকো পুকারে’, ‘লগ জা গলে’, ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’, ‘না যেও না, না যেও না রজনী এখনও বাকি’— সবই এখনও যেন ছবির মতো ভেসে ওঠে, জানান সে দিনের দর্শক দুর্গাপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক তাপস সরকার। লতার সঙ্গে সে দিন ডুয়েটে ছিলেন নীতীন মুকেশ, উষা মঙ্গেশকর, শৈলেন্দ্র সিংহরা।
তবে, লতার অনুষ্ঠানের আবেদন কতটা, তা টের পেয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। পুলিশের পরামর্শে, ২০ নভেম্বর সকাল ১০টার বদলে, ভোর ৫টা থেকে শুরু হয় টিকিট দেওয়া। ক্লাবের কর্তা শঙ্কর বলেন, “মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে সকাল ৭টায় টিকিট সব বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এখনও মনে আছে, টিকিট না পেয়ে সে দিনের বহু দর্শকের কান্নার কথা।”