ইব্রাহিম এবং তারাপদ। নিজস্ব চিত্র।
ব্যাঙ্কের পাসবই হারিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন এক বৃদ্ধ। সে নিয়ে থানায় ডায়েরি করতে যেতে হবে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে। ওই বৃদ্ধের পাশে থাকতে ক্রাচে ভর দিয়েও এগিয়ে এলেন তাঁর বন্ধু। বুধবার ওই দীর্ঘ সফরে সঙ্গ দিলেন তাঁকে। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওই বৃদ্ধের এই বন্ধুত্বের দৃষ্টান্তে মুগ্ধ থানার আধিকারিকেরা। ধর্মের বেড়াজাল যে ওই দুই বৃদ্ধের বন্ধুত্বে থাবা বসাতে পারেনি, সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।
ইব্রাহিম মল্লিক এবং তারাপদ রায়— দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধুই খণ্ডঘোষের উখরিদে পাশাপাশি বাড়িতে থাকেন। বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত তারাপদ তেমন সুস্থ নন। তবে ইব্রাহিমও যে একেবারে সুস্থ, তা-ও বলা যাবে না। সম্প্রতি ব্যাঙ্কের পাসবই হারিয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েন তারাপদ। সে কথা শুনে তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দেন ইব্রাহিম। এর পর বৃদ্ধ তারাপদকে সঙ্গে নিয়ে ক্রাচে ভর দিয়ে থানার দিকে হাঁটা শুরু করেন তিনি। দু’জনে হাজির হন খণ্ডঘোষ থানায়। সে সময়ে থানায় ডিউটি অফিসার হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন এসআই রিটন শেখ। তারাপদ তাঁকে বলেন, “কিছু দিন আগে ব্যাঙ্কের পাসবইটি হারিয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্কে লেনদেন করতে পারছি না। ব্যাঙ্কের অফিসারেরা থানা থেকে ‘মিসিং ডায়েরি’ করে কপি আনতে বলেছেন।’’ সঙ্গে সঙ্গে তারাপদকে মিসিং ডায়েরি করে জিডি নম্বর দিয়ে দেন রিটন। এর পর ইব্রাহিমের কাছে তাঁর সমস্যার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘স্যার, আমার কোনও সমস্যা নেই। ব্যাঙ্কের পাসবই হারিয়ে যাওয়ায় তারাপদ দাদা খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন। এতটা রাস্তা পেরিয়ে একা থানায় আসতে পারবেন না বলছিলেন। তাই তারাপদ দাদাকে সাহায্য করার জন্য তাঁকে সঙ্গে নিয়ে থানায় এসেছি।’’
যা শুনে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান থানার আধিকারিকেরা। মুগ্ধ হয়ে দু’বন্ধুকে জড়িয়ে ছবিও তোলেন তাঁরা। খণ্ডঘোষ থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘ইব্রাহিম এবং তারাপদবাবুর এই স্নেহের বন্ধন অটুট থাকুক।’’