মঙ্গলবার শক্তিগড় থানা। নিজস্ব চিত্র।
রাজু ঝা খুনের ঘটনায় আততায়ীদের নীল গাড়িটি থেকে মিলেছিল একাধিক নম্বরপ্লেট। গাড়িটি সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য পেতে প্রয়োজন ছিল ‘চেসিস’ নম্বর, ইঞ্জিন নম্বরের। কিন্তু সেগুলিও দুষ্কৃতীরা নষ্ট করার চেষ্টা করেছে বলে জেনেছিল পুলিশ। সেগুলি উদ্ধার করা যাবে কি না, সে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার থানা চত্বর ত্রিপলে ঢেকে সেই গাড়ি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় তথ্য উদ্ধার করা গিয়েছে বলে ফরেন্সিক দলের সদস্যেরা জানান।
এ দিন দুপুর ১২টা ২০ নাগাদ কলকাতার বেলগাছিয়া ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট চিত্রাক্ষ সরকারের নেতৃত্বে চার জনের দল শক্তিগড় থানায় পৌঁছয়। সেখানে খুনের মামলার তদন্তকারী অফিসার অরূপ ভৌমিক-সহ সিট-এর সদস্যদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রের খবর, সিসিটিভি ফুটেজ দেখা, ঘটনার বিবরণ শোনা ও নানা তথ্য আদানপ্রদান হয়। এর পরে থানা ভবন থেকে কিলোমিটার তিনেক দূরে শক্তিগড়ে ঘটনাস্থলে যান ফরেন্সিক দলের সদস্যেরা। সেখানে ঘিরে রাখা জায়গায় পড়ে থাকা কাচের টুকরো, মাটির টুকরো, রক্তমাখা মাটি-সহ নানা নমুনা সংগ্রহ করেন। এঁকে আনা ছবি দেখে তাঁদের গোটা বিষয়টি মেলাতেও দেখা যায়। এর পরে ফরেন্সিক দলটি ফিরে যায় শক্তিগড় থানায়। সেখানে ত্রিপলের ঢাকা দিয়ে রাখা ছিল আততায়ীদের গাড়ি এবং রাজু যেটিতে বসে খুন হন, সেই সাদা এসইউভি। দু’টি গাড়ি থেকে ঢাকা খোলা হয়। থানা চত্বরে কার্যত ত্রিপলের পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, ফরেন্সিক দলের তরফে গাড়ি দু’টির বিভিন্ন অংশের ছবি তোলা হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, নীল গাড়ির ‘চেসিস’ নম্বর ও ইঞ্জিন নম্বর নষ্ট করে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সেগুলি উদ্ধার করা যাবে কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এ দিন সেগুলি উদ্ধার করা গিয়েছে কি না, পুলিশ সে ব্যাপারে কোনও তথ্য দিতে চায়নি। তবে ফরেন্সিক দল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশের যা চাহিদা ছিল, তা উদ্ধার করা গিয়েছে। বিকেল সওয়া ৪টা নাগাদ বেরিয়ে যায় ফরেন্সিক দলটি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজুর সঙ্গী ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের দু’টি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেগুলি থেকে ব্যবসায়িক নানা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। জানা গিয়েছে, রাজু ও ব্রতীন দু’টি করে ফোন ব্যবহার করতেন। লতিফের সঙ্গে শনিবার সকাল থেকে বার আটেক কথা হয় রাজুর। ১ এপ্রিল, ঘটনার দিন কলকাতা পৌঁছে তাঁদের একটি বড় হোটেলে ওঠার কথা ছিল বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা। যদিও পুলিশ সূত্রের দাবি, ব্রতীন তাদের কাছে দাবি করেছেন, কলকাতায় গিয়ে রাজুর ফ্ল্যাটে ওঠার কথা ছিল তাঁদের।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সড়কে একাধিক জায়গায় সিসি ক্যামেরা পরীক্ষা করা হলেও, ঘটনার দিন বাঁশকোপা থেকে দুর্গাপুরের দিকে আততায়ীদের গাড়িটির উপস্থিতি নজরে পড়েনি। তবে জানা গিয়েছে, রাজুদের গাড়ি পৌঁছনোর আগে নীল গাড়িটি ঘটনাস্থলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। সেটি কিছুটা এগিয়েও যায়। তার পরে আবার ঘুরে আসে বলে জেনেছে পুলিশ।