প্রতীকী ছবি।
‘লকডাউন’-এ গোড়া থেকেই ছাড় রয়েছে তাঁদের পরিষেবায়। তাই অন্য অনেক ক্ষেত্রের কর্মীদের মতো শুরুতে খুব বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েননি তাঁরা। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, তত চিন্তা বাড়ছে বলে দাবি ‘অনলাইন’-এ বরাত পেয়ে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ায় নিযুক্ত কর্মীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, কারবার কার্যত লাটে ওঠার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। টানা ১২ ঘণ্টা কাজে থেকেও কোনও বরাত মিলছে না, এমন দিনও যাচ্ছে বলে দাবি তাঁদের অনেকের।
রবিবার সকালে বর্ধমানের পার্কাস রোডে এক জায়গায় আড্ডা দিচ্ছিলেন ‘অনলাইন’ মারফত বরাত আসার পরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজে যুক্ত কিছু যুবক। তাঁরা জানান, অন্য সময়ে রবিবার দম নেওয়ার ফুরসত থাকে না। এখন সেই ব্যস্ততা নেই। দীর্ঘদিন ধরে একটি সংস্থার হয়ে খাবার পৌঁছনোর কাজ করা বীর বাহাদুর, সুমিত সাহাদের দাবি, ‘লকডাউন’ ঘোষণা হওয়ার পরে প্রথম সপ্তাহখানেক তবু কিছুটা বাজার ছিল। কিন্তু এপ্রিলের গোড়া থেকে তা কমতে থাকে। গত সপ্তাহ তিনেক হাল খুব খারাপ দাঁড়িয়েছে। সুমিতের দাবি, আগে যেখানে দিনে তাঁদের কুড়ি-বাইশটি জায়গায় খাবার সরবরাহ করতে হত, সেখানে এখন সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে দু’টি-তিনটিতে।
একই কাজে নিযুক্ত বর্ধমানের আর এক যুবক বিষ্ণু মণ্ডল জানান, তাঁদের পেশায় অনেকে সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করার জন্য তৈরি থাকছেন। কিন্তু বরাত আসছে নামমাত্র। একটিও বরাত পাচ্ছেন না, এমন দিনও যাচ্ছে। লাভ তো দূর, মোটরবাইকের তেল বা নিজেদের টিফিনের খরচ জোটানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বরাত মিলছে না কেন? খাবার পৌঁছে দেওয়ায় যুক্ত শুভঙ্কর রায়, অয়ন দাসদের মতে, ‘‘সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই বাইরে থেকে খাবারের প্যাকেট নিতে ভয় পাচ্ছেন। আর এখন নগদ টাকা দিয়ে খাবার নেওয়ার পদ্ধতি বন্ধ। ফলে, যাঁদের ‘অনলাইন’-এ দাম মেটানোর সুযোগ-সুবিধা নেই, তাঁদের খাবার নিতে অসুবিধা হচ্ছে।’’ এই পরিস্থিতিতে সরকারের তরফে তাঁদের জন্য কোনও সুরাহার ব্যবস্থা করা হোক, আর্জি ওই যুবকদের।
‘অনলাইন’-এ বরাত নিয়ে খাবার সরবরাহ করা একটি সংস্থার বর্ধমানের ‘টিম লিডার’ ইমতিয়াজ কবির জানান, তাঁদের খাবার পৌঁছে দেওয়ার কর্মী রয়েছেন একশো থেকে দেড়শো সকলেরই এখন রোজগার অনেকটা কমে গিয়েছে। ‘মাস্ক’ দেওয়া-সহ নানা বিষয়ে সংস্থা তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করলেও, বরাতের সংখ্যা কম হওয়ায় সমস্যা কাটছে না। কবে এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই মিলবে, সে দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা।