এ দিন কাটোয়া মহকুমার নানা এলাকায় বিঘের পর বিঘে জমিতে জল দাঁড়িয়ে ছিল। বোরো ধান কার্যত ঝরে পড়েছে। শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে আনাজেও।
ঝড়ে ক্ষতির আভাস মিলেছিল বৃহস্পতিবারই। চাষাবাদের ক্ষেত্রে তার বহর বাড়ল আরও। এ ছাড়াও বাড়ির চাল উড়ে যাওয়া, গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে বহু জায়গায়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে বহু এলাকা। শুক্রবার প্রশাসন, রাজনৈতিক দলগুলির তরফ থেকে সাহায্য করা হয় বেশ কিছু পরিবারকে। মহকুমাশাসক (কাটোয়া) অর্চনা পন্ধরিনাথ ওয়াংখেড়ে বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ জানার কাজ চলছে।’’
এ দিন কাটোয়া মহকুমার নানা এলাকায় বিঘের পর বিঘে জমিতে জল দাঁড়িয়ে ছিল। বোরো ধান কার্যত ঝরে পড়েছে। শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে আনাজেও। প্রশাসনের তরফে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। খাজুরডিহি পঞ্চায়েতের মণ্ডলহাট, পানুহাট, ঘোষপাড়া এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই। বহু কাঁচা বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। ত্রাণ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। তৃণমূল ও বিজেপি ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল ও ত্রিপল দিয়ে এসেছে। ব্লক প্রশাসনও সাহায্য করার জন্য নামের তালিকা সংগ্রহ করেছে।
এ বছর কাটোয়ায় ৩২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। এই সময় পাকা ধান ঘরে তোলা চলছে। চাষিদের দাবি, প্রায় ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কাটোয়ার দু’টি ব্লকের শ্রীখণ্ড, জগদানন্দপুর, কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুর, নলিয়াপুর, দত্তবাটি গ্রামে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। মন্তেশ্বর ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মামুদপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েতের বেশ কিছু এলাকায় ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার সকালে ব্লক কৃষি দফতরের একটি প্রতিনিধি দল ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা গোয়ালডাঙা, গড়সোনাডাঙা, বন্ধুপুরের মাঠে ঘোরেন। চাষি চিন্ময় ঘোষ, রনজিত ঘোষ, চন্দ্রকান্ত ঘোষ, জার্মান মণ্ডল, বারিক শেখরা বলেন, ‘‘এ বছরেও ঋণ নিয়ে বোরো ধানের চাষ করেছি। এই সময় ধান পেকে গিয়েছে। কাটার সময়। তার মধ্যে শিলাবৃষ্টিতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। গাছ থেকে প্রচুর ধান ঝরে গিয়েছে।’’ মামুদপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান পারভিন মণ্ডলের দাবি, ‘‘কয়েকশো বিঘা জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিদর্শনের তথ্য দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানো হবে।’’ ব্লক কৃষি আধিকারিক কনক দাসও জানান, মামুদপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েতের প্রায় ১১টি মৌজার কয়েকশো বিঘা জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খেতে জল জমতে না দেওয়া, দ্রুত ধান তোলার পরামর্শ দেন তিনি।
গলসি ১ ব্লকের হরিপুর, রামপুরের চাষিরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। রামপুর গ্রামের জয়দেব ঘোষ নামে এক চাষি বলেন, ‘‘১২ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। কয়েক মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে সব গেল।’’ ভারিচার চাষি সাইদুল মণ্ডলও বলেন, ‘‘চার বিঘা জমির ধান কেটে রাখা ছিল জমিতেই। তা এখন জলের তলায়। আদৌ ওই ধান ঘরে তুলতে পারব কি না বুঝতে পারছি না।’’ ঝড়ে গলসি বাজারে বেশ কয়েকটি দোকানের চাল উড়ে গিয়েছে।
বিদ্যুৎ না থাকাতেও মুশকিলে পড়েন বহু মানুষ। কাটোয়া মণ্ডলহাট ঘোষপাড়ার বাসিন্দা সনৎ ঘোষ বলেন, ‘‘জলঝড়ের জেরে আমাদের এলাকায় প্রায় ছ’ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। তার ছিঁড়ে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল। পরে বিদ্যুৎ দফতরের লোকজন এসে সমস্যা মেটান।’’ বিদ্যুত দফতরের বিভাগীয় আধিকারিক (কাটোয়া) লাল্টু বিশ্বাস জানান, পরপর দু’দিনে ছোট-বড় অনেকগুলি খুঁটি ভেঙে পড়েছিল। বেশ কয়েকটি খুঁটি উপরে দূরে ছিটকে যায়। গাছ ভেঙে তারের উপরে পড়ায় সমস্যা বাড়ে। উচ্চপদস্থ কর্তারা রাতভর রাস্তায় ছিলেন। কর্মীরা জরুরি ভিত্তিতে কাজ করে রাতেই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন।