এই সেতুই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে, জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। নিজস্ব চিত্র
মোটরবাইক যাতায়াতও বিপজ্জনক, পুরনো রেলসেতু সম্পর্কে এমনই পর্যবেক্ষণ বিশেষজ্ঞদের। বর্ধমানের ওই সেতুটি দ্রুত ভেঙে ফেলার পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা। সেইমতো সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সেতু ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানাল রেল।
৪ জানুয়ারি রাত ৮টা নাগাদ বর্ধমান স্টেশনের শতাব্দী প্রাচীন ভবনের একাংশ ভেঙে পড়ে। ওই ঘটনায় এক জনের মৃত্যু হয়। রেলের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনার তদন্তে নামে। সেই সময়েই কাটোয়া রোডের উপরে ৯০ বছরের পুরনো সেতুটি পরিদর্শন করে রেলের একটি দল। তারাই রেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই সেতুর কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। সেখান দিয়ে এখন মোটরবাইক যাওয়াও বিপজ্জনক। সেতুটি দ্রুত ভেঙে ফেলতে হবে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতুটি ভাঙার জন্য ‘রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড’কে (আরভিএনএল) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থাকে সেতু ভাঙার কাজ শুরু করতেও বলা হয়েছে। ওই সংস্থা সেতু ভাঙতে ১৫ দিন সময় নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আরভিএনএল, রেলের আধিকারিকেরা দেখা করেছেন বিষয়টি নিয়ে।
সম্প্রতি রেলের হাওড়া ডিভিশনের কর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী ও অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম নিয়োগী। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই বৈঠকে ছোট গাড়ি, সাইকেলের মতো ধীরগতির যানবাহনের জন্য বিকল্প পথের দাবি জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু তা মানা যাবে না বলে রেলের তরফে জানানো হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ জানান, নয়ের দশক থেকে নতুন সেতু তৈরি করা নিয়ে বারবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বারবার নকশা বদল করা হয়েছে। সেতু চালু হওয়ার পরে জেলা প্রশাসনের এই দাবি মানা সম্ভব নয়।
পুরনো সেতুটির নীচের অংশের প্লাস্টার ভেঙে পড়ছে। বিভিন্ন জায়গায় ফাঁকফোকর দেখা যাচ্ছে। উপরের অংশের অবস্থাও তথৈবচ। অনেক দিন আগেই ওই সেতুতে ‘হাইট বার’ ও ‘ব্যারিকেড’ দিয়ে গাড়ি যাতায়াত বন্ধ করা হয়েছে। ফুটপাতে যাতায়াতও বন্ধ। এখন শুধু মোটরবাইক, টোটোর মতো গাড়ি চলছে। তা-ও বিপজ্জনক বলে জানিয়েছে রেলের বিশেষজ্ঞেরা। নতুন সেতু তৈরির পরে আর পুরনো সেতু সংস্কার করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দাবি রেল সূত্রের।
স্টেশনে ভবনের একাংশ ভেঙে যাওয়ার পরে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বর্ধমানে আসেন। তখন হাওড়ার ডিআরএম ইশাক খান বলেন, ‘‘পুরনো রেলসেতু ভাঙার কথা অনেক আগেই হয়েছিল। আরভিএনএল এবং জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’’ রেল সূত্রে জানা যায়, ওই সেতুর মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে বর্ধমান স্টেশনের কর্তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করে সেতু ভাঙার জন্য সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সেতুটির অবস্থা ভয়ঙ্কর, সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে সেতু ভাঙার আগে রেল, পুলিশ, পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তার পরে যৌথ পরিদর্শনে গিয়ে সেতু ভাঙার দিনক্ষণ ঠিক করা হবে।’’