—ফাইল চিত্র।
স্থায়ী আমানত ভেঙে জনৈক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর পিছনে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের কর্মীরাই জড়িত রয়েছেন বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জেলখানা মোড়ের শাখার তিনটি স্থায়ী আমানত থেকে তিন বারে ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে। প্রত্যেকবারই রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসার (এফও) সৌগত চক্রবর্তীর সই জাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ। স্বয়ংক্রিয় পুনর্নবীকরণ (অটো রিনিউয়াল) করার নির্দেশ থাকলেও ব্যাঙ্ক কী ভাবে সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে স্থায়ী আমানত ভেঙে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা দিল, সেই প্রশ্ন তুলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২৪ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও ব্যাঙ্ক লিখিত কোনও জবাব দেয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে
জানা গিয়েছে।
রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরী বুধবার বলেন, “ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতসারে ও স্বয়ংক্রিয় পুনর্নবীকরণের নির্দেশ থাকার পরেও কী ভাবে স্থায়ী আমানত ভাঙা হল জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ও অর্থ বিভাগের দু’জন কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যাঙ্কের জেলখানা মোড়ের শাখায় তিনটে স্থায়ী আমানতে তিন কোটি টাকার উপর জমা ছিল। ২০২২ সালে ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ হয়। ওই বছরের অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি আমানতের পুরো টাকা (১ কোটি ২৩ লক্ষ) একজনের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। দু’সপ্তাহ পরে আরও একটি স্থায়ী আমানত ভেঙে ৩৪ লক্ষ টাকা ও ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আর একটি স্থায়ী আমানত থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা জনৈক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে।
গত সপ্তাহে স্থায়ী আমানত ভেঙে একটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে ২১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লেটার হেড’-এ দেওয়া চিঠি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বড়বাজার শাখায় জমা পড়ে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় কারসাজি ধরা পড়ে যায়। ওই শাখার সিনিয়র ম্যানেজার বর্ধমান থানায় অর্থ দফতরের দুই কর্মীর নামে এফআইআর করেন। চিঠির প্রতিলিপি পাওয়ার পরে অভিযুক্তদের শো-কজ় করা হয়। একই সঙ্গে রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের কথায়, “সব টাকা সম্ভবত এক জনের কাছেই পাঠানো হচ্ছিল। কারণ দু’টি ব্যাঙ্কের দু’টি শাখায় পাঠানো চিঠিতে যে সংস্থা বা ব্যক্তিকে টাকা পাঠানোর জন্য বলা হয়েছিল, তাদের ফোন নম্বর কিন্তু একটাই!”
তবে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক তাদের গাফিলতির কথা মানতে চায়নি। তাদের যুক্তি, স্থায়ী আমানত ভাঙানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগের কর্মীরাই এসেছিলেন। তাঁরাই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তা ছাড়া ওই স্থায়ী আমানত ভাঙানোর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতির জন্য সরাসরি ও রেজিস্ট্রি করেও চিঠি পাঠানো হয়েছিল, দাবি তাঁদের।
ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক শাখার আধিকারিক রাজীব গোস্বামী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ আমরা ঠিক মানছি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠির ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে।” বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য জানিয়েছে, ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাদের চিঠির জবাব দিলেই আমানত ভাঙানোর চিঠি দিয়েছিল কি না জানা যাবে।