হারমোনিয়াম-সহ অন্যান্য উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হায়দর। নিজস্ব চিত্র।
আনন্দবাজার ডিজিটালে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরে দীনদরিদ্র পরিবারের দৃষ্টিহীন কিশোর গায়কের পাশে দাঁড়ালেন সঙ্গীত অনুরাগী।
পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার আলুটিয়ার গ্রামের দৃষ্টিহীন কিশোর মহম্মদ হায়দর আলির স্বপ্ন গায়ক হওয়ার। কিন্তু সংসারের অনটন সেই স্বপ্নপূরণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোয়নি বলে ছেলেকে একটা হারমোনিয়ামও কিনে দিতে পারেননি হায়দরের বাবা শেখ আনসার আলি।
ছোটবেলা থেকে নিজের চেষ্টায় গান শিখেছে হায়দর। যে কোনও গান একবার শুনেই তুলে ফেলতে পারে সহজাত দক্ষতায়। তার গান হাবড়ার অশোকনগর বাসিন্দা সঙ্গীতপ্রেমী রিয়া রুবির হৃদয় স্পর্শ করে গিয়েছে। তাই তিনি নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান খারিজ করে সেই অর্থে হায়দরকে কিনে দিলেন নতুন একটি হারমোনিয়াম। পাশাপাশি, পূর্ব বর্ধমানের গলসির বাসিন্দা সঙ্গীতপ্রেমী আজিজুর রহমান ও লালন শেখ নতুন জামাকাপড় ও খাদ্যসামগ্রী হায়দরের পরিবারকে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সুরে বাজছেন না সাধন, ফিরহাদ বললেন, ওস্তাদির দরকার নেই
হারমোনিয়াম-সহ অন্যান্য উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হায়দর । জানিয়েছে, এ বার তার কাজ, হারমোনিয়ামে অনুশীলন করে গানের জগতে নিজেকে আরও মেলে ধরা ।
হায়দরের বাবা শেখ আনসার আলি পেশায় রাজমিস্ত্রি । মা হাফিজা বেগম গৃহবধূ। হায়দাররা তিন ভাই, তিন বোন। বড় দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট দিদি মোমিনা খাতুনের এখনও বিয়ে হয়নি। বড় দাদা ও বাবার সামান্য রোজগারেই হায়দরদের পরিবারের সকলের অন্নসংস্থান হয় ।
আরও পড়ুন: আমপান, কালবৈশাখী সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বিজন
বাবা আনসার আলি বলেন, ‘‘ হায়দরের বয়স ১৪ বছর। ছোট থেকেই সে দৃষ্টিহীন। তবে ছোট বয়স থেকেই গানবাজনার প্রতি ওর আকর্ষণ। ওই সময়ে বায়না শুরু করলে ওকে রেডিয়োর গান শোনালেই কান্নাকাটি বন্ধ হয়ে যেত।’’
একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হায়দার নিজের মনে মনেই গান গাইতে শুরু করে। এখন মোবাইলে বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে গান শুনে তা আয়ত্ত করে সেই গান গায়। আনসার আলি জানান, গান শেখার জন্য তাঁর ছেলের যে একটা হারমোনিয়াম প্রয়োজন, তা তিনি বোঝেন। ছেলেও দীর্ঘদিন ধরে তাঁর কাছে একটা হারমোনিয়াম চেয়ে আবদার করে এসেছে। কিন্তু অভাব অনটনের কারণে তিনি ছেলেকে একটা হারমোনিয়াম কিনে দিতে পারেননি । তালিম নেবার জন্য ছেলেকে কোনও সঙ্গীত শিক্ষকের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থাও করতে পারেননি । তবুও হায়দর হাল ছাড়েনি । নিজের চেষ্টাতেই হায়দার দু'তিনটে বড় রিয়ালিটি শোয়ে গানের অডিশন দিয়েছিল। কিন্তু উপযুক্ত তালিমের অভাবে তাকে পিছিয়ে আসতে হয়েছিল ।
হাবড়ার অশোকনগর বাসিন্দা রিয়া রুবি এবং অন্যান্য সাহায্যকারীদের কাছে কৃতজ্ঞ হায়দরের পরিবার। নতুন হারমোনিয়ামকে আঁকড়েই হয়তো আগামিদিন তার গায়ক হওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হবে । আশার আলো দৃষ্টিহীন কিশোরের পরিবারে।