Bardhaman

আর্সেনিকের থাবা, তবু পাইপের জল অধরাই

কোথাও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রকল্প রয়েছে, কিন্তু জল পৌঁছয় না। আবার কোনও জায়গায় সংযোগের সংখ্যার তুলনায় পরিকাঠামো অপ্রতুল হওয়ায় জল যায় না বাড়ি বাড়ি।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৩ ০৭:১৪
Share:

পূর্বস্থলীর এই স্কুলের জলে মিলেছে আর্সেনিক। এখনও বন্ধ সেই নলকূপ। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।

আড়াই দশক আগে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক মিশে থাকা নলকূপের জল পান করে মারা গিয়েছিলেন একই পরিবারের দশ জন। এখনও সেই ক্ষত দগদগে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের মাদ্রা গ্রামে। পূর্বস্থলী ২ ব্লকেও আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন অনেকে। তবু ওই দুই ব্লকের বহু বাড়িতে পৌঁছয়নি নলবাহিত পানীয় জল।

Advertisement

কোথাও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রকল্প রয়েছে, কিন্তু জল পৌঁছয় না। আবার কোনও জায়গায় সংযোগের সংখ্যার তুলনায় পরিকাঠামো অপ্রতুল হওয়ায় জল যায় না বাড়ি বাড়ি। মাস তিনেক আগে নিচু জায়গাগুলিতে সরকারি প্রকল্পের জল মিলছে না বলে অভিযোগ করে রাস্তা অবরোধ করেন দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের একাংশ বাসিন্দা। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের মাজিদা পঞ্চায়েতের কল্যাণপুর গ্রামে এখনও শরীরে আর্সেনিকের ঘা নিয়ে বেঁচে রয়েছেন অনেকে। বাসিন্দাদের দাবি, পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকে চাষের জন্য মাটির নীচ থেকে প্রচুর জল তোলা হয় সারা বছর। সেই কারণেই ঘরে ঘরে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছনো জরুরি। নাহলে আর্সেনিক ছড়াবে আরও বেশি। সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল পরীক্ষায় ধরা পড়ে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের চারটি স্কুলের নলকূপের জলে মিশে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। ব্লক প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পৌঁছতেই দ্রুত নলকূপগুলি সিল করে দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য কারিগরির এক কর্তার কথায়, ‘‘মাটির তলা থেকে এই ব্লকে প্রচুর জল তোলা হয়। ফলে পানীয় জল নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত জল পরীক্ষা করাতে হবে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক দশক আগে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কোমলনগর এলাকায় ভাগীরথীর জল শোধন করে ৬৬টি মৌজায় পাঠানোর উদ্দেশ্যে একটি প্রকল্প তৈরি হয়। তৈরির পরে দেখা যায় ৩৫টি মৌজায় জল পৌঁছচ্ছে। কল্যাণপুরের উপর দিয়ে জলের পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়া হলে জল মেলে না সেখানেই। ওই গ্রামের এক বাসিন্দা মাসুদ রহমান জানান, সরকারি প্রকল্পে সব বাড়িতে জল পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাইপ লাইন পাতা হলেও জল মেলে না। বাধ্য হয়ে জলের মূল পাইপের সঙ্গে অন্য পাইপ জুড়ে পানীয় জল পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।

Advertisement

পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ সাহার দাবি, ‘‘গোলাহাট, মৌডাঙা, শ্যামবাটি, বড়গাছির মতো বেশ কিছু এলাকায় পানীয় জলের অভাব রয়েছে। বহু জায়গাতেই জল পৌঁছয় কম। আর্সেনিক এলাকা বলে চিহ্নিত এই ব্লকে পানীয় জলের অভাব নিয়ে প্রচারে সরব হব আমরা।’’ বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘পূর্বস্থলী১, ২ ব্লক দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিক এলাকা হিসাবে চিহ্নিত। প্রশাসনিক উদাসীনতায় বেশির ভাগ বাড়িতে পরিস্রুত জল যায়নি। প্রচারে তৃণমূলের বেহাল উন্নয়ন তুলে ধরব আমরা।’’ যদিও পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিকের দাবি, ‘‘সব এলাকাতেই পিএইচই-র প্রকল্প রয়েছে। বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার কাজও এগিয়েছে। আগে যেখানে তিনটি স্ট্যান্ডপোস্ট ছিল, এখন সেখানে হয়তো তিনশো বাড়িতে পাইপ লাইন পেতে সংযোগ দিতে হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন জায়গায় জলাধারের মতো পরিকাঠামো বাড়াতে হচ্ছে।’’

পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, মাটির উপরের জল ব্যবহারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোমলনগর প্রকল্পে জল তোলার যন্ত্রাংশ এবং জলাধার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য গাছা, হৃষি-সহ পাঁচটি জায়গায় জলাধার তৈরির জমি খোঁজা হচ্ছে। ৩৪ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে।ঝাউডাঙা, পিলা, পাটুলী, কৃষ্ণবাটি এলাকা নিয়েও আলাদা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, দাবি তাঁর।

কল্যাণপুর গ্রামের হামিদ মল্লিক, আজিদা বিবিদের মুখে, হাতের চামড়ায় এখনও আর্সেনিকের ক্ষত স্পষ্ট। তাঁরা বলেন, ‘‘এ সব গ্রামের জলে বিষ আছে। পরিস্রুত পানীয় জল না পেলে আবারও থাবা বসাবে আর্সেনিক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement