kali Puja 2022

কোথাও তিনি ‘খেপী’, কোথাও ‘বড় মা’

বর্ধমান শহরের ঐতিহাসিক কালী মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম বোরহাটে সাধক কমলাকান্তের কালীবাড়ি। সাধক ১৮০৯ সালে মন্দিরটি স্থাপন করেন।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২২ ০৯:৫৫
Share:

শেষ তুলির টান। খণ্ডঘোষে। নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতি শেষ। রীতি অনুযায়ী, সূর্যাস্তsর পরেই মন্দির কিংবা মণ্ডপে প্রাণ পাবেন দেবী কালী। কোথাও দক্ষিণাকালী, কোথাও আনন্দময়ী কালী, ভবতারিণী, ব্রহ্মময়ী, ভদ্রকালী, শ্মশানকালী, ডাকাতকালী বা কোথাও চামুণ্ডা, ছিন্নমস্তা— এমন নানা রূপে পূজিত হন দেবী।

Advertisement

বর্ধমান শহরের ঐতিহাসিক কালী মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম বোরহাটে সাধক কমলাকান্তের কালীবাড়ি। সাধক ১৮০৯ সালে মন্দিরটি স্থাপন করেন। কথিত রয়েছে, এই মন্দিরেই পঞ্চমুণ্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে কালীর সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তিনি। ভক্তদের ইচ্ছায় এখন সাড়ে ছ’ফুট উচ্চতার কষ্টিপাথরের কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এই মন্দিরে। কমলাকান্তের জন্ম পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায়। পাঁচ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পরে গলসির চান্না গ্রামে মামারবাড়িতে বসবাস শুরু তাঁর। জানা যায়, তাঁর কালীসাধনার কথা জানতে পেরে বর্ধমানে নিয়ে আসেন সেখানকার তত্‍কালীন মহারাজ তেজচন্দ্র মহাতাব। সেখানে কালীর পুজোপাঠের দায়িত্ব দেন। সে জন্য কমলাকান্তকে বোরহাটের লাকুড্ডিতে একটি বাড়ি এবং কোটালহাটে একটি মন্দিরের জমি দান করেছিলেন তেজচন্দ্র। সে জমিতেই মন্দির স্থাপন করে সিদ্ধিলাভ করেন কমলাকান্ত।

বর্ধমান শহরের কাঞ্চনগরে রয়েছে কঙ্কালেশ্বরী মন্দির। ইতিহাস সন্ধিৎসুদের দাবি, ওই মূর্তিটি পাল আমলের। কষ্টিপাথরের মূর্তিটি বাংলার ১৩২৩ সালে খণ্ডঘোষের সালুনের কাছে দামোদর থেকে পাওয়া যায়। কাঞ্চননগরের বাসিন্দারা মূর্তিটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। দেবী অষ্টভুজা, চামুণ্ডা। সাত ফুট লম্বা ও তিন ফুট চওড়া মূর্তিটি কার্তিক মাসের অমাবস্যায় জাঁকজমক করে পূজিত হয়। কথিত আছে, দামোদর থেকে তুলে এনে যে মন্দিরে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়, সেটি আদতে পাল আমলের বিষ্ণু মন্দির। পরে বর্ধমানের রাজারা মন্দির সংলগ্ন জমি করমুক্ত করে দিয়েছিলেন। এখন মন্দির কমিটির পরিচালনায় বৃদ্ধাবাস, ভোগ খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এ ছাড়াও কার্জন গেট থেকে একটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Advertisement

কাটোয়া শহরে খ্যাপাকালী মন্দির ঘিরে শহর বা পার্শ্ববর্তী গ্রামের ভক্তেরা ছাড়াও, নদিয়া-বীরভূম জেলার অনেকে ভিড় জমান। যিনি কাটোয়াবাসীর কাছে ‘খেপী মা’ বলে পরিচিত। এই পুজোর শুরু নিয়ে নানা মত রয়েছে। ফাঁকা জায়গায় দেবীর পুজো হত। এখন সেখানে দেবীর নিজস্ব মন্দির, ভোগঘর রয়েছে। দেবীর গায়ে প্রায় ৬০-৭০ ভরি গয়না থাকে। মন্দির চত্বরে দুর্গা-শিব মন্দির রয়েছে। পুজোর দিন লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয় বলে উদ্যোক্তাদের দাবি। বিসর্জনের রাতে দেবীকে শহর পরিক্রমা করানো হয়। রাস্তায় হাজার-হাজার মানুষ রাতভর দাঁড়িয়ে থাকেন। বিসর্জনের পরে খড়ের কাঠামোয় দেবী সারা বছর পূজিত হন। কাটোয়া শহরেই নিম গাছ ঘিরে পূজিত হন ‘ঝুপো মা’। এখানে দেবীর কোনও মূর্তি নেই।

কালনার লক্ষ্মণপাড়া এলাকায় ভট্টাচার্য পরিবারের কালীপুজো এ বার চারশো বছরে পা দিল। দেবী এখানে ‘বড়কালী’ নামে পরিচিত। দেবীর নাম অনুযায়ী এলাকার নামও বড়কালীতলা। পরিবারের সদস্যদের দাবি, দেবীর পুজোয় রামকৃষ্ণ, আনন্দময়ী, ওঙ্কারনাথের মতো সাধকেরা এসেছিলেন। দেবীর ভোগে চিংড়ি মাছ-সহ বেসমের বড়া, দু’রকম ডালের খিচুড়ি, পায়েস, চাটনি-সহ একাধিক পদ রান্না হয়। বিসর্জনে দু’টি মশাল জ্বালানো হয়।

ভাতারের বড়বেলুন গ্রামের ‘বড় মায়ের’ পুজোয় ভাতার ছাড়াও জেলা-ভিন্‌জেলার প্রচুর মানুষ আসেন। পুজোর উদ্যোক্তাদের দাবি, ৭০০ বছর আগে ভৃগুরাম বিদ্যাবাগীশ নামে এক সাধক পঞ্চমুণ্ডের আসন প্রতিষ্ঠা করেন। এলাকায় তিনি ‘বুড়ো গোঁসাই’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনিই এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা। গ্রামবাসী জানান, সারা বছর মন্দিরে কোনও বিগ্রহ থাকে না। লক্ষ্মীপুজোর দিন থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার মূর্তি তৈরি হয়। পুজোর দিন দুপুরে দেবীকে রং করা হয়, সন্ধ্যায় নানা অলঙ্কারে সাজানো হয়।

প্রাচীন এই সব পুজোকে ঘিরে উৎসব হয়। সমস্ত ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণির মানুষ উৎসবে যোগ দিয়ে সাংস্কৃতিক পরম্পরার ধারা বহন করেন।

(সহ-প্রতিবেদন: কেদারনাথ ভট্টাচার্য ও সুদিন মণ্ডল)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement