চলছে তদন্ত। নিজস্ব চিত্র
‘চেন-খুনি’ শিকারের তালিকায় সবচেয়ে ছোট দশম শ্রেণির ছাত্রীটি। ধরা পড়ার তিন দিন আগে কালনা ২ ব্লকের সিঙেরকোণে বাড়িতে ঢুকে একা থাকা ওই কিশোরীর উপরেই হামলা চালায় কামরুজ্জামান সরকার। গুরুতর মাথায় চোট নিয়ে ১২ দিন লড়াই করে বুধবার রাতে মারা যায় ওই ছাত্রী। পুলিশের দাবি, এ নিয়ে ‘চেন-খুনি’র খুনের সংখ্যা দাঁড়াল নয়।
৩০ মে সকালে মেয়েকে রান্না করে দিয়ে কাজে গিয়েছিলেন মা। বাড়িতে একাই ছিল ওই কিশোরী। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মা ফিরে দেখেন, ঘর অন্ধকার। ডাকাডাকি করেও মেয়ের সাড়া মিলছে না। ঘরে ঢুকে আলো জ্বালতেই দেখেন, বিছানায় রক্তাত্ব, অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে মেয়ে। মাথায় একাধিক চোটের চিহ্ন। তখনও নিঃশ্বাস পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে পড়শিদের সাহায্যে ওই কিশোরীকে কালনা হাসপাতাল, সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। বুধবার রাতে মারা যায় সে।
এ দিন বর্ধমান মেডিক্যালে মৃতার মেসোমশাই অভিযোগ করেন, ‘‘দু’দিন ধরে হাসপাতালে গণ্ডগোলের জেরে কোনও চিকিৎসাই পায়নি মেয়েটা।’’ যদিও হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহার দাবি, চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি ছিল না।
তদন্তকারীদের দাবি, কামরুজ্জমান জেরায় জানিয়েছে কী ভাবে ওই হামলার ছক কষেছিল সে। তদন্তকারীদের দাবি, ওই দিন বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে চারটে নাগাদ মোটরবাইক নিয়ে সিঙেরকোণে পৌঁছয় ধৃত। তীব্র গরমে ফাঁকাই ছিল রাস্তা। কাছাকাছি একটি আমগাছের নীচে মোটরবাইক রেখে আশপাশের বাড়িতে চুরির ফাঁদ পাতে সে। চোখে পড়ে একটি মাটির বাড়ির পাশে ছোট্ট একতলা বাড়ি। ধৃত জেরায় জানিয়েছে, জানালা দিয়ে কমবয়েসী একটি মেয়েকে শুয়ে থাকতে দেখে সে। বাড়িতে আর কেউ আছে কি না জানতে দরজার সামনে গিয়ে হাঁক পাড়ে সে। উত্তর না মেলায় নিশ্চিত হয় বাড়ি ফাঁকা। তদন্তকারীদের দাবি, এক জন বয়স্ক মানুষকে বাড়ির পাশে দেখে প্রথমে কিশোরীর ঘরে ঢোকার সাহস পায়নি সে। মিনিট কুড়ি ঘোরাফেরা করে দ্বিতীয় বার ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে সে।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, ঘরের দরজা ভেজানো ছিল। ফলে সহজেই ঢুকে ঘুমন্ত ছাত্রীর মাথায় ব্যাগে থাকা লোহার রড দিয়ে পরপর দু’বার আঘাত করে সে। কিশোরী বিছানায় লুটিয়ে পরার পরে যৌন নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘জেরায় কামরুজ্জমান জানিয়েছে দু’বার আঘাতের পরে কিশোরীকে মৃত ভেবে নেয় সে। তার পরে যৌনাঙ্গে আঙুল ঢুকিয়ে অত্যাচার করে।’’ কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিছানার উল্টো দিকে আলমারিতে থাকা হাজার খানেক টাকা ও কিছু গয়না নিয়ে পালায় সে।
পুলিশের দাবি, যে ভাবে মাথায় হাড় গুঁড়িয়ে গিয়েছিল তাতে ওই ছাত্রীর বাঁচার সম্ভাবনা কম ছিল। তপবে ও বেঁচে থাকলে তদন্তে অনেক সুবিধে হত।
এ দিন ছাত্রীর মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছতেই ‘খুনি’র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে। ওই কিশোরীর এক আত্মীয়া বলেন, ‘‘মেয়েটা কিছু বলে যেতে পারল না। ফাঁসি চাই খুনির।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।