ফাইল চিত্র
চাষের কাজে অনবরত মাটির তলার জল ব্যবহার চিন্তায় ফেলেছিল ভূ-বিশেষজ্ঞদের। ভূগর্ভস্থ জল কমায় প্রভাব পড়েছিল চাষেও। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’ এবং তার পরবর্তী ঝড়বৃষ্টিতে জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি কৃষি বিশেষজ্ঞদের। বেড়েছে নদী, নালা, খালের জলও।
বছর খানেক আগে কেন্দ্রীয় ভূজল বোর্ডের পূর্ব ক্ষেত্রের বিজ্ঞানীরা জেলার কালনা ১, পূর্বস্থলী ১, ভাতার-সহ বেশ কয়েকটি ব্লকে মাটির নীচে জলের কী পরিস্থিতি তা চাষিদের নিয়ে আলোচনাসভা করে জানিয়ে দেন। মাটির তলার জল যথেচ্ছ ব্যবহার করলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক-সহ কী-কী সমস্যার মুখে পড়তে হবে তার ব্যাখ্যা দেন।
বিশেষজ্ঞদের দাবি ছিল, পূর্ব বর্ধমানে চাষিরা সব থেকে বেশি মাটির তলার জল ব্যবহার করেন। অথচ, গত বেশ কয়েক বছরে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসায় জলস্তর কমছে। বোরো চাষের এলাকা কমিয়ে অন্য চাষ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয় চাষিদের।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রতি বছর ১,২০০ থেকে ১,৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি দরকার হয়। বৃষ্টির বেশির ভাগটাই হয় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে। তবে এ বার মে থেকে জুন মাসের মাঝামাঝির মধ্যেই ৬৩০ মিলিমিটারের আশেপাশে বৃষ্টি হয়েছে জেলার বেশির ভাগ ব্লকে। কালনা কৃষি খামারের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৩৪১.২ মিলিমিটার। গত দশ বছরে মে মাসে এত বৃষ্টি হয়নি। এই কৃষি খামারের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১০ সালে মে মাসে বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৫.৮ মিলিমিটার, ২০১১ সালে ১১০.৪ মিলিমিটার, ২০১২ সালে শূন্য, ২০১৩ সালে ১৭৯.৪ মিলিমিটার, ২০১৪ সালে ১৬৬.৯ মিলিমিটার, ২০১৫ সালে ১৪৪ মিলিমিটার, ২০১৬ সালে ২৫৪.৫ মিলিমিটার, ২০১৭ সালে ১৩৫.৩ মিলিমিটার, ২০১৮ সালে ১০১ মিলিমিটার এবং ২০১৯ সালে ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। জুন মাসেও যেখানে গড় বৃষ্টি পাতের পরিমাণ ১২০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার, সেখানে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টি মিলেছে ১৪৫.৬ মিলিমিটার।
মহকুমা কৃষি আধিকারিক আশিস বারুই বলেন, ‘‘আমপানের প্রভাবে ২০ মে বৃষ্টি হয়েছে ১১৭.৮ মিলিমিটার। তার সঙ্গে মে মাসে ন’দিন এবং জুন মাসে ১০ দিন বৃষ্টি-দিন (২.৫ মিলিমিটার অথবা তার বেশি বৃষ্টিপাত এক দিনে হলে তাকে বৃষ্টির দিন হিসাবে গণ্য করা হয়) ছিল। এর ফলে, মাটির তলার জলস্তর বৃদ্ধি পাবে।’’ তাঁর দাবি, মাটির তলার জলস্তর বাড়ার জন্য এক দিনে বেশি বৃষ্টিপাতের থেকে বেশি দিন ধরে কম বৃষ্টিপাত অনেক বেশি কার্যকরী। সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘শুধু জলস্তর বৃদ্ধি নয়, ভাল বৃষ্টির জেরে পুকুর, নদী, নালা ভর্তি। মাসখানেক বাদে পাট কাটার পরে, পচানোর জলের অভাব হবে না।’’