‘এই আকালেও স্বপ্ন দেখি’: মাঠ ভরা জলে মোষের গাড়ির ভরসায় ধান তুলছেন চাষিরা। মন্তেশ্বরে। ছবি: সুদিন মণ্ডল
টানা ‘লকডাউন’-এ নগদের অভাব চলছিল। চাষকে আঁকড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছিলেন অনেকে। শুক্রবার কৃষি দফতর ও উদ্যানপালন দফতর যৌথ সমীক্ষা করে জানাল, জেলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ছ’শো কোটি টাকার ফসল সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এ দিন দুপুরে জেলা প্রশাসনের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বৈঠকে ওই রিপোর্ট জমা দিয়েছে দুই দফতর। বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় তিনশোটি খামারের ৪০ হাজার মুরগি মারা গিয়েছে। ১,৪০০টি মুরগির খামার ক্ষতির মুখে। ১৭৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১,৩২৪টি মৌজায় প্রায় ৪২,০৭০ হেক্টর জমির বোরো ধানে ক্ষতি হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। টাকার অঙ্কে এই পরিমাণ প্রায় তিনশো ষাট কোটির কাছাকাছি। এ ছাড়া, ১৮,৮০৮ হেক্টর জমির তিল, ৬,৭৬৪ হেক্টর পাটজমি, পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আনাজে ক্ষতি হয়েছে। ৪৭ পঞ্চায়েতের ৩৩০টি মৌজায় ২২৫ হেক্টর মুগ, ৫৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১,৪০৫ হেক্টর জমির ফলেও ক্ষতি হয়েছে।
জেলা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে এ দিন একটি বৈঠক করেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলাশাসক বিজয় ভারতী। তাঁদের আশঙ্কা, রোদ উঠলে আরও কিছু কাঁচা বাড়ি ভাঙবে, পুরনো দিনের পাকা বাড়িও ক্ষতি হতে পারে। এ নিয়ে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত নজরদারি বাড়াতে হবে। তবে কিছু এলাকায় টেলিফোন এবং ইন্টারনেটের সমস্যার জন্য রিপোর্ট পেতে দেরিও হয়।
জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’দিনের সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ছ’শো কোটি টাকা। সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির হিসাব শনিবার করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে রিপোর্ট তৈরি করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে সকলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’’ জেলার সহ সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘আমপানের ধাক্কায় জেলায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে চাষাবাদ। নষ্ট হয়েছে বহু ঘরবাড়ি। জেলা থেকে সমস্ত রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে রাজ্যে। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াবে।’’
তবে আমপান যে ধাক্কা দিয়েছে তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চাষিদের বেশ খানিকটা সময় লাগবে, অনুমান কৃষি- কর্তাদের। কাটোয়া ২ ব্লকের মেঝিয়ারির চাষি ঝুলন দাস, বিকাশ দাসদের কথায়, “জমির মালিকের সঙ্গে বিঘা পিছু পাঁচ মন করে ধান দেওয়ার কথা হয়েছিল। আমপানে সব নষ্ট হয়ে গেল, এখন কী করে ধান শোধ করব?’’ একই খেদ শোন যায় কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, কাটোয়ার অধিকাংশ চাষিদের কথায়। তাঁরা বলেন, “ধান তো পেলাম না, উল্টে সাব-মার্সিবলের জল-খরচ কী ভাবে দেব, সেটাই চিন্তার।’’ প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, একটি মৌজার ৩৩ শতাংশ এলাকা সম্পূর্ণ ক্ষতি হলে প্রাকৃতিক-বিপর্যয়ের জন্য চাষিরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ ছাড়া, ব্যক্তিগত ভাবে বাংলার শস্যবীমাতে যাঁরা নাম তুলেছেন, তাঁরা পদ্ধতি মেনে আবেদন করলে বিমা সংস্থা ক্ষতিপূরণ দেবে।
এ দিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় সম্পূর্ণ ভাবে কাঁচা বাড়ি নষ্ট হয়েছে ৬০২টি, আংশিক ভেঙেছে ৫,০২২টি। জেলায় ৪১৭টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। ৩৭টি ট্রান্সফর্মার খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। কালনা মহকুমায় বিএসএনএলের অনেকগুলি টাওয়ার নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পানীয় জল সরবরাহ এলাকার বেশ কয়েকটি পাঁচিল পড়ে গিয়েছে বলে রিপোর্ট করা হয়েছে।