চাকদোলা সেতুর কাছে এই জায়গায় জল চুরি হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
কড়া আইনি ব্যবস্থা নেই। সে কারণেই জল চুরির ঘটনা নজরে এলেও তা আটকাতে পারেন না তাঁরা, দাবি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্তাদের। এর সুযোগ নিয়েই জেলার নানা এলাকায় পাইপলাইন ফাটিয়ে জল চুরি চলছে বলে অভিযোগ।
হিরাপুরে দামোদরকে কেন্দ্র করে প্রায় চার দশক আগে কালাঝরিয়া জলপ্রকল্প তৈরি করা হয়। আসানসোল ছাড়াও পাইপলাইনে এই জল প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে রানিগঞ্জের সিহারশোল জলধারে পৌঁছয়। সিহারশোল, রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর, জামুড়িয়ার চিচুরিয়া, অণ্ডালের ছোড়া, শঙ্করপুর-সহ মোট সাতটি ট্যাঙ্কে জল পাঠানো হয় সিহরশোল জলাধার থেকে। অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গায় প্রধান পাইপলাইন ফুটো করে জল টেনে নিচ্ছেন কিছু কিছু বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হিরাপুরের চাষিপট্টিতে পাইপলাইন ফাটিয়ে জল নিয়ে চাষের কাজ চলছে। আসানসোলের মহিশীলায় একটি পুকুরে জল ফেলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আসানসোলে কালিপাহাড়ি মোড় ও চুনাভাটির কাছে পাইপ ফুটো জল নেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। জামুড়িয়া ডিভিসি মোড় থেকে চাঁদা পর্যন্ত এলাকায় পাইপলাইনে ফুটো করে সেখানে পাইপ বসিয়ে জল টেনে নেওয়া হচ্ছে। এমনকি, এ ভাবে জল নিয়ে নানা হোটেল, গ্যারাজ চলছে বলেও অভিযোগ। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে জামুড়িয়ার তপসি সেতু, চাকদোলা সেতু ও নিউকেন্দা ওসিপি কলোনি মোড়ে পাইপলাইনের ফুটো থেকে সিঙ্গারন গ্রাম, চাকদোলা, কৃষ্ণনগর খনি আবাসনের কিছু লোকজন, ওসিপি কলোনি, ডোবরানা, কেন্দা মাঝিপাড়া, ডোমপাড়ার বাসিন্দাদের একাংশ জল নেন বলে অভিযোগ।
জামুড়িয়ার ভূতবাংলো এলাকায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশ দিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপলাইন গিয়েছে। অভিযোগ, সেখানকার দু’টি পাড়ায় জলের সংযোগ না থাকায় পাইপলাইনে ফুটো করে জল সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছিলেন কিছু বাসিন্দা। সম্প্রতি তা ছিন্ন করা হয়েছে। ভূতবাংলো থেকে কিলোমিটার দুয়েকের মধ্যে দু’টি সেতু রয়েছে, যার পাশ দিয়ে জলের লাইন গিয়েছে। ওই দুই জায়গাতেও ফুটো করে দীর্ঘদিন ধরে জল চুরি চলছে বলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে খবর।
তপসি পঞ্চায়েতের প্রধান সুখচাঁদ গোপের দাবি, প্রায় সব জায়গায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কল আছে। কিন্তু তাতে পর্যাপ্ত জল মেলে না। সে কারণেই মূল পাইপলাইন ফুটো করে জল সংগ্রহ করেন অনেক বাসিন্দা। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর জল সমস্যা মেটাতে তৎপর হলে এই ঘটনা ঘটবে না বলে মনে করেন তিনি।
জনস্বাস্থ্য কারিগর দফতরের আসানসোল ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত রায়ের বক্তব্য, “বিদ্যুৎ চুরির ক্ষেত্রে যেমন কড়া আইনি ব্যবস্থা আছে, জল চুরির ক্ষেত্রে সে রকম কোনও কড়া আইন নেই। তার জেরে শাস্তি হয় না।” তিনি জানান, এ ভাবে মাঝপথে চুরি হয়ে যাওয়ায় জলাধারগুলিতে পর্য়াপ্ত জল পৌঁছচ্ছে না। ফলে, জল দেওয়ার নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাচ্ছে না। ওই দফতরের কর্তাদের দাবি, পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতায় বারবার অবৈধ সংযোগ ছিন্ন করা হলেও আবার পাইপ ফাটিয়ে জল নেওয়ার ব্যবস্থা করে নিচ্ছে এলাকাবাসীর একাংশ। কী ভাবে তা বন্ধ করা যাবে, সে নিয়েই চিন্তায় তাঁরা।